নিউজ ডেস্ক:
ফাল্গুন মানে শীতের রুক্ষতা থেকে আড়মোড়া ভেঙে নতুন রুপে প্রকৃতির জেগে উঠা। ফাল্গুন মানে ফুলে ফুলে চারপাশ সেজে উঠা। ফাল্গুনের রুপ দেখে কবি গুরু লিখেছিলেন-
ওহে সুন্দর, মরি মরি
তোমায় কী দিয়ে বরণ করি।
তব ফাল্গুন যেন আসে,
আজি মোর পরাণের পাশে।
কবি গুরুর গানের কথার মতো অনেকেই চিন্তিত কিভাবে বরণ করবেন বসন্তকে। কি হবে পয়লা ফাল্গুনের সাজ পোশাক। এসব নিয়েই থাকছে এবারের আয়োজন।
ফাল্গুনী সাজ
বসন্তকে বরণ করতে, পয়লা ফাল্গুনে যারা বের হতে চান তারা আগে থেকেই এর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। শীতের রুক্ষতায় ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ, নিষ্প্রাণ। তাই আগে যত্ন না নিলেও বসন্ত বরণের আগে ত্বকের যত্ন নিন। বসন্ত বরণের বেশির ভাগ অনুষ্ঠান হয় দিনে। তাই সাজের ক্ষেত্রে কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে।
* সারাদিন বাইরে থাকার পরিকল্পনা থাকলে সাজটা হবে হালকা কিন্তু পরিপাটি।
* শীত শেষ হলেও, হিমেল হাওয়া ফাল্গুনে ও থাকে। তাই মেকআপ করার আগে ত্বককে ময়েশ্চারাইজড করুন।
* রোদের মাঝে ঘোরাঘুরি হবে তাই অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন লাগাবেন।
* মেকআপ করলে মেকআপ বেইজ যেন ভালো হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। গায়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ওয়াটার বা ওয়েল বেইজড ফাউন্ডেশন লাগান।
* বসন্তের সাজে হালকা আইশ্যাডো বেশি মানানসই।
* কাজল বাঙালী নারীর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে কাজল। বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানে আইলাইনার না ব্যবহার করে মোটা করে কাজল পড়ুন।
* ফাল্গুনের সাজে ঠোঁট একটু কালারফুল হলে ভালোই লাগবে। তবুও নিজের পছন্দ ও গায়ের রঙ এর সঙ্গে মানায় এমন রঙয়ে ঠোঁট সাজান।
* সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে থাকলে চুল বেঁধে নিতে পারেন। চুলে খোঁপা বা বেণী করলে ফুল পড়তে পারেন। ফুল বসন্তের সাজে অন্য মাত্রা যোগ করবে।
* দেশজ উপকরণে তৈরি গহনা পড়তে পারেন। কাঠ, পুঁতি বা মাটির গহনা বেশ বানাবে।
* কানে ঝোলানো দুল পড়লে গলায় কিছু নাও পড়লে হবে। পড়তে চাইলে ছোট পুতির বা মাটির লম্বা মালা পড়ুন।
* শুধু যদি ঘোরার পরিকল্পনা থাকে হাত ভরে কাচের রেশমী চুড়ি পড়তে পারেন।
* কর্মজীবি নারী বা ছাত্রীরা হাত ভরে চুড়ি না পড়ে মেটাল, কাঠ বা সুতার মোটা একটা বা দুইটা পড়তে পারেন। কাজের অসুবিধাও হবে না। আবার উৎসব এর আমেজ ও বজায় থাকবে।
পোশাকে ফাল্গুন
বর্তমানে বিশেষ করে শহুরে মানুষরা বসন্তকে বরণ করার রীতিটা যার যার সাধ্যমতো পালন করছে। তাই তো সকল কাজের ফাঁকে পরিকল্পনা করছেন বসন্তে কোন পোশাকে রাঙাবেন নিজেদেরকে। শাড়ি না সালোয়ার কামিজ নাকি ফতুয়া? এ নিয়ে আগে থেকেই চলে জল্পনা কল্পনা। ফাল্গুনের দিন কর্মজীবি নারী থেকে গৃহিণী, কিশোরী থেকে তরুণী সবাই চায় নিজেকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে বসন্তের বসনে।
* বাংলার ছয় ঋতু যেন ছয়টি রঙ নিয়ে ধরা দেয় আমাদের মাঝে। বসন্তের ও আছে নিজস্ব রঙ বাসন্তী হলুদ, গেরুয়া, কাচাঁ হলুদ। এগুলো ছাড়াও কমলা, লাল বা সবুজ রঙ ও বেছে নিতে পারেন পোশাকে।
* যারা সারাদিন ঘুরবেন, তারা তাতেঁর বা টাঙ্গাইলের শাড়ি বেছে নিতে পারেন।
* এক কালারের জমিন ভিন্ন রঙয়ের চিকন পাড়ের শাড়ি সাধারণ মনে হলেও অন্য রকম স্নিগ্ধতা ছড়াবে।
* হাতের কাজ করা শাড়ি কর্মজীবিরা বেছে নিতে পারেন। ভালো লাগবে।
* নানা নকশার ব্লক বা স্প্রে করা সুতি শাড়ি যেকোনো বয়সের নারী অনায়াসে ফাল্গুনে পড়তে পারেন।
* এক রঙয়ের শাড়ি পড়লে ব্লাউজটা একটু রঙচঙে হলে বেশি ভালো লাগবে।
* যারা শাড়ি পড়তে চান না, তারা উৎসবের রঙয়ের সঙ্গে মিলে যায় এমন যেকোনো সালোয়ার কামিজ বা ফতুয়া পড়তে পারেন। টাইডাই বা বাটিকের সালোয়ার কামিজ ও নির্ধিদ্বায় পড়তে পারেন। হাতের কাজ করা বা দেশীয় মোটিভ আছে এমন নকশার সালোয়ার কামিজ বেছে নিন।
* সুতি, তাতঁ বা খাদির সালোয়ার কামিজ পড়ুন। সিল্ক, জর্জেট এসব ধরনের কাপড় এ সময় না পড়লেই ভালো লাগবে।
* ফতুয়া পড়লে টাইডাই করা স্কার্ফ বা ওড়না গলায় ঝুলিয়ে দিন। দেখতে ভালো লাগবে।
* গামছা প্রিন্টের শাড়ি বা ফতুয়া ও পড়তে পারেন অনায়েসে।
জরুরি টিপস
* অনেকেই সারাদিনের জন্য বের হোন, তাই অবশ্যই সঙ্গে পানি বা জুস নিবেন। ঘোরাফেরার মাঝে পানি পান করতে ভুলবেন না। নয়তো ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হতেও পারে।
* হাই হিল না পড়াই উত্তম। একেবারে ফ্ল্যাট জুতা পড়তে না চাইলে সেমি ফ্ল্যাট জুতা পড়ুন। ঘুরাফিরা করে আরাম পাবেন।
* ছোট ব্যাগ না নিয়ে একটু বড় বা মাঝারি সাইজের ব্যাগ নিন। যাতে প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন- পানির বোতল, ছাতা, মেকআপ এর টুকটাক জিনিস নিতে পারেন।
* সঙ্গে ভেজা স্পঞ্জ বা ওয়েট টিস্যু রাখতে পারেন। মেকআপ করলে অনেকেই প্রচুর ঘামেন। হাত বা শাড়ির আচল দিয়ে না মুছে ওয়েট টিস্যু দিয়ে চেপে চেপে ত্বক মুছে নিবেন।
* অনেকেই সকালে একবার বের হয়ে দুপুরে ঘরে ফিরে আবার বিকেলে বের হোন। সেক্ষেত্রে বার বার ভারী মেকআপ না করে যেকোনো একটা সময় ঠিক করে নিন। বার বার ভারী মেকআপ নিলে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে ত্বকে ব্রণ এর সমস্যা হতে পারে।