নিউজ ডেস্ক: চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মনে করেন, প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হতে পারে।
ঠিক সেই সময়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে। রফতানি ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় লক্ষ্য অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না বলে মনে করে সংস্থাটি।
শুধু তাই নয়, এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি বাড়বে না, বরং একই থাকবে। এডিবি মনে করে, এই প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে তখনই, যখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকবে, যা ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে, কিন্তু বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ঠিক রাখবে। স্বাভাবিক আবহাওয়া বিরাজ থাকবে।
বৃহস্পতিবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০১৭ প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এডিবির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর কাই লি, অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ও বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বার প্রমুখ। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রিন্সিপাল কান্ট্রি স্পেশালিস্ট জয়তসানা ভার্মা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উৎপাদন খাতে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মের বাজারে প্রবেশ করছে। এ ছাড়া কৃষি ক্ষেত্রে কম উৎপাদনশীল বিপুল শ্রমিককে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া আরও একটি চ্যালেঞ্জ। সেইসঙ্গে মহিলাদের কর্মসংস্থান তৈরির চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকার কর্মসংস্থান তৈরিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার দুটি বিষয়কে কর্মসংস্থান বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ধরেছে। প্রথমত. মেনুফ্যাকচারিং খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং গ্রামীণ পরিবর্তন ও আঞ্চলিক উন্নয়ন। এ অবস্থায় সরকার যদি মেনুফ্যাকচারিং খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান বাড়াতে চায় সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণে ডুয়িং বিজনেস খরচ কমাতে হবে।
জয়তসানা ভার্মা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি বাজে সময় পার করায় এবং তেলের বাজারে মন্দার কারণে সেসব দেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো টাকার পরিমাণ গত দু’বছর ধরে কমছে। এতে চলতি অর্থবছর রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ কমতে পারে। আর আগামী অর্থবছরে এটা কমতে পারে ৪ শতাংশ। কেননা ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ফলে আগামী বছর রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি কমার হার কমে যাবে। বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের আয়ের ওপর কর বসানোর ফলেও রেমিটেন্স কমতে পারে।
রফতানির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আগের অর্থবছরে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। গত কিছুদিনে রফতানি আয়ে ধীরগতির কারণে এবার তা কমে ৬ শতাংশ হতে পারে। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ শতাংশ হবে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদাসহ বাংলাদেশি মার্কেট শেয়ার বাড়তে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর কৃষি, শিল্প ও সেবা সব ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি কমবে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ২ দশমিক ৪ শতাংশে। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এটি আরও কিছুটা কমে হবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। কারণ কৃষির সম্প্রসারণ এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে।
অপরদিকে শিল্প খাতে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে হবে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়া। তবে পরবর্তী সময়ে যদি রফতানি প্রবৃদ্ধি এবং রেমিটেন্স বৃদ্ধি পায় তাহলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়লে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে হতে পারে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমে হতে পারে ৬ শতাংশ। কৃষি ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমার প্রভাব পড়বে সেবা খাতে। এ ছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এডিবির স্টাফ কনসালটেন্ট মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা অনেক বেশি বেড়েছে। ফলে রফতানি ও রেমিটেন্স কমলেও টেকসই প্রবৃদ্ধি হবে। বাংলাদেশে আয় বাড়ছে, সেটি আবার খরচ হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি করছে, এটা খুবই ভালো দিক। তবে কৃষির প্রবৃদ্ধি ওইভাবে কমেনি। কিন্তু জিডিপিতে অবদান কমেছে। কারণ শিল্পসহ অন্যান্য খাত এগিয়ে গেছে। অর্থনীতি উন্নত হলে এরকম হয়েই থাকে।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৬ দশমিক ১ শতাংশে। যা গত অর্থবছর ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ছাড়া আগামী ২০১৮ সালে মূল্যস্ফীতি আরও কিছুটা বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়তে পারে মূল্যস্ফীতিতে।