সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন অধ্যাপক ইউনূস। সে সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের উপস্থাপনায় ‘রাখমান রিভিউ’ নামের একটি পডকাস্টে কথা বলেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সেই কথোপকথন লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
যেখানে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি তখন প্যারিসের একটি হাসপাতালে ছিলাম, ছোট একটি অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসাধীন ছিলাম। তখনই প্রথম ফোনকল পাই। যদিও আমি প্রতিদিন মুঠোফোনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলাম, কিন্তু এমন কিছু আশা করিনি। ছাত্রনেতারা আমাকে বলল, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) চলে গেছেন। এখন আমাদের সরকার গঠন করতে হবে। দয়া করে, আপনি আমাদের জন্য সরকার গঠন করুন।’ আমি বললাম, ‘না, আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি এসব কিছু জানি না এবং এর সঙ্গে যুক্ত হতেও চাই না।’”
পরদিন ছাত্রনেতারা আবার ফোন করে জানায়, “আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কাউকে পাইনি। আপনাকেই আসতে হবে।” শেষ পর্যন্ত অধ্যাপক ইউনূস রাজি হন। তিনি বলেন, “তোমরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করছ, অনেক রক্ত ঝরেছে। তোমরা যদি এতদূর আসতে পারো, তাহলে আমারও কিছু করা উচিত। এই মুহূর্তে সরকারের সংস্কার দরকার। আমি রাজি, তোমরা কি একমত?” তখন ছাত্রনেতারা আর কোনো আপত্তি করেনি।
সেই দিনের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে ইউনূস বলেন, “দু’ঘণ্টা পর এক নার্স এলো, হাতে ফুলের তোড়া। আমি বললাম, ‘এটা কেন?’ সে বলল, ‘আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, আমরা এটা জানতাম না!’ আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি এটা কোথা থেকে জানলেন?’ তখন সে বলল, ‘সব গণমাধ্যমে, সব টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হচ্ছে যে আপনি বাংলাদেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী।’ তখনই আমি প্রথমবারের মতো এটা জানতে পারলাম।”
“এরপর আরও কয়েক ঘণ্টা পর হাসপাতালের পরিচালক ও বোর্ড সদস্যরা এলেন, তারা আবারও ফুল দিয়ে আমাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে শুভেচ্ছা জানালেন। তারা বললেন, ‘দুপুরের আগে আপনাকে হাসপাতাল ছাড়তে দেওয়া হবে না।’ আমি তখন পরিচালকের কাছে দেশে ফেরার প্রস্তুতির জন্য সহায়তা চাইলাম। তিনি বললেন, ‘অবশ্যই, আপনার কথা আমাদের মানতেই হবে। আপনি এখন প্রধানমন্ত্রী। আপনার নিরাপদ যাত্রার জন্য আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করব।’”