নীলকন্ঠ প্রতিবেদন:
বিভিন্ন পত্রিকায় মহেশপুরের বজরাপুরে পুরানো নৌকা উদ্ধার নিয়ে খবর প্রকাশের পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে একটি তদন্ত দল গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাড়ি মাইকেল মধুসূদন দত্তবাড়ি যাদুঘরের সহকারী কাস্টডিয়ান মো. হাসানুজ্জামান ও অফিস সহকারী মো. হারুন অর রশিদ মহেশপুর উপজেলার এসবিকে ইউনিয়নের বজরাপুর গ্রামে এসে মাটির নীচ থেকে উদ্ধার হওয়া শতাধিক বছরের পুরানো বজরার (নৌকা) অংশ বিশেষ পরীক্ষা করেন। এসময় তারা বজরাপুর গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।
সহকারী কাস্টডিয়ান মো. হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে জানান, বাওড়ের পাশের জমি থেকে মাটি খুড়ে তোলা বজরাটি বহু পুরানো। এটি উদ্ধারের পর গ্রামের মহিলারা নৌকার কাঠ নিয়ে যাচ্ছে। সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসন বা চেয়ারম্যান-মেম্বার গ্রহণ করেনি। অথচ তাদের দায়িত্ব ছিল পুরাকীর্তি হিসেবে প্রথমে সংরক্ষণ বা পাহারা দিয়ে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে জানানো।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাজে অসহযোগিতার বিষয়ে এসবিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফান হাসান চৌধুরী নুথান জানান, বিষয়টি তিনি প্রথমে গুরুত্ব দেননি। কারণ অনেকেই তাকে বলেছেন বাওড়ের ধারের একটি জমি থেকে পচা কাঠ উঠছে। ফেসবুকেও এমন খবর তিনি দেখেছেন। তিনি বলেন, শুক্রবার বিকেলে তার কাছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ফোন করেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে বিষয়টির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌস জানান, প্রথমেই স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সেখানে গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করে পাহারা বসানোর দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। এমনকি তারা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তদন্ত দলকেও অসহযোগিতা করেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। তিনি বলেন, পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করা সকলেরই দায়িত্ব। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা যদি এটিকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব না দেন, বা এগিয়ে না আসেন, তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একার পক্ষে এটা সংরক্ষণ বা তথ্য উদ্ঘাটন করে সেখানে কিছু করা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকায় বজরাপুর গ্রামে পুরানো নৌকা পাওয়া নিয়ে তথ্যভিত্তিক খবর প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয় বজরাপুর গ্রামের নজের আলীর ছেলে মনছের আলী বজরাপুর বাঁওড় থেকে ধানখেতে পানি দেওয়ার জন্য সেচখাল খনন করছিলেন। খাল খুড়তে খুড়তে তার কোদালের মাথায় নৌকার কিছু অংশ উঠে আসে। এ খবর চাওর হয়ে পড়লে গ্রামের মানুষ সমষ্টিগতভাবে নৌকার সন্ধানে খনন করতে থাকে। তিন দিন ধরে খননের পর বধুবার পুরো নৌকার আকৃতি খুঁজে পায়।
খননকাজে যুক্ত বজরাপুর গ্রামের ইসমাইল মল্লিক জানান, নৌকাটি লম্বায় প্রায় একশ ফুট ও চওড়া ২০ ফুট হবে। নৌকার বেশিরভাগ অংশ বাওড়ের মধ্যে ঢুকে আছে। তবে খননের পর এখন সেখানে পানি উঠে গেছে।
জানা গেছে, বজরা অধিক ওজন বহন করার উপযোগী বড় ধরনের নৌকার সাধারণ নাম। খ্রিষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে ইউরোপীয় এবং স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এই ধরনের নৌকা ব্যবহার করত নৌবিহারের জন্য। মহেশপুরের বজরাপুর গ্রাম একটি প্রাচীন জনপদ। এই গ্রামটি কপোতাক্ষ নদের সংযোগস্থলে গড়ে ওঠে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ জমিদার ও আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল। ফলে এই নৌকাটি বজরাপুর গ্রামের নামকরণ ও গ্রামের মানুষের জীবনযাপনের সাক্ষ্য বহন করে বলে অনেকেই মনে করেন।