রিপোর্ট : ইমাম বিমান
ঝালকাঠিতে শতাধিক বছরের পুরনো নলছিটি উপজেলার খ্রিষ্ঠান পল্লীটি নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার রাজাবাড়িয়া গ্রামে ২২টি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠা শতাধিক বছরের পুরনো খ্রিষ্ঠান পল্লীতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পালন হচ্ছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন। জেলার একমাত্র খ্রিস্টান পল্লীটি পল্লী ও তৎসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বড়দিনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছ।
এ বিষয় রাজাবাড়িয়া খ্রিষ্টান পল্লী ও যুব সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লাজারেজ গমেজ বলেন, ২ শতাধিক বছর পূর্ব পর্তুগিজ শাসন আমলে এ অঞ্চলে খ্রিস্টানরা বসতি স্থাপন করে। বর্তমানে ২২ টি পরিবারে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ২২৫ জন। গড়ে উঠেছে গির্জা, বিদ্যালয় ও বাসভবন। গির্জার সামনে নির্মাণ করা হচ্ছে পুরোহিত সাধু আন্তনী স্মরণে একটি গ্রোটো। শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা ও পানিসহ নানা সমস্যায় দিন কাটছে খ্রিস্টান পল্লীর বাসিন্দারা। বিভিন্ন সময় জাতীয় সংদস বা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকালে যোগাযোগের জন্য অনুন্নত রাস্তা সংস্কার, পল্লীর সামনে বয়ে যাওয়া খালের উপর ঘাটলা নির্মান ও শিশু-কিশোরদের পড়াশুনা ব্যবস্থা করার নানা প্রতিশ্রুতি দেয় প্রার্থীরা। তবে তা কেবল প্রতিশ্রুতি মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও নাগরিক সুবিধা বলতেও তেমন কিছু পাচ্ছে না তারা। নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিতের কারনে খুশির আমেজ যেন একটু কমই মনে হচ্ছে। তিনি তার অভিযোগে আরো বলেন, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার রাজাবাড়িয়া গ্রামের এধরনেরই একটি খ্রিষ্টান পল্লীতে বসবাসকারীরা তাদের শিশু-কিশোর সন্তানদের পড়াশুনার জন্য এ গ্রামে নেই কোন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় । তবে রবি নিকলজ গমেজ নামক এক গৃহ শিক্ষক পল্লীর শিশুদের ১ম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি সমমানের শিক্ষা দেন। আর এ জন্য তাকে থাকা, খাওয়াসহ সামান্য বেতন দেয়া হয়। বিশেষ কোন সরকারী সহায়তা নেই খ্রিস্টান পল্লীর বাসিন্দাদের জন্য। এছাড়াও গোসল কিংবা ওজু করার জন্য পানি সমস্যা প্রকট বলে জানান খ্রিস্টান পল্লীর বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা লাজারেজ গমেজ ওরফে ফকু গমেজ (৭০)। ক্ষোভ ও হতাশার কন্ঠে লাজারেজ গমেজ বলেন, ছবি তুলে লিখে কি হবে। আপনাদের লেখালেখির কারণে যদি কোন বরাদ্দ আসলেও তা পল্লী পর্যন্ত নিয়ে আসতে গিয়ে অর্ধেকের বেশী নেমে যায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও টেবিলে। তবে সেই সহায়তা গ্রহণ করার সময় আমাকে ‘পুরো টাকা বুঝে পেলাম’ বলেই স্বাক্ষর দিয়ে আসতে হয়। তার চেয়ে কোন সহায়তা ছাড়া আমাদের নিজেদের অর্থায়নে যে ভাবে অনুষ্ঠান করা যায় সেভাবেই চালিয়ে নেয়া হয়।
এ খ্রিষ্টান পল্লীর আরো কয়েকজন বাসিন্দা সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এখানে যেভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে তা দেশ বা দেশের বাইরে কোথায় আছে আমাদের জানানেই। আমরা যেমন অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে সম্মান পাই তেমনি আমাদেরকেও তারা বুপযুক্ত সম্মান দিয়ে চলেন। খ্রিষ্টান পল্লীর শিশুদের শিক্ষাদানে নিয়োজিত শিক্ষক রবি নিকলজ গমেজ বলেন, শিশু শ্রেণি থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের বাংলা, ইংরেজিসহ আবশ্যিক বিষয়ের পাশাপাশি ধর্মী ও নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয়। শিক্ষা নিতে শুধু খ্রীষ্টানদের ছেলে-মেয়েরাই আসে না। পার্শ্ববর্তি অন্যান্য ধর্মের শিশুরাও আসেন।
দারিদ্রতা কিংবা নানা অসংগতি নিত্য সঙ্গী হলেও উৎসব আয়োজনে কমতি নেই এ খ্রিস্টান পল্লীর কোন ঘরে। ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকেই আলোক সজ্জা ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিনের শুভ সূচনা করা হয়। গির্জায় অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাত ১০ টার পরে ঘরে ঘরে কীর্তন এবং শিশু বৃদ্ধ বনিতা সকলের জন্য থাকছে উৎসবের নাস্তা, কেক কাটা ও অতিথি আপ্যায়ন।
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব হিসাবে ২৩ ডিসেম্বর (শনিবার) রাত থেকে ঝালকাঠি জেলাধীন একমাত্র খ্রিস্টান পল্লীতে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। বড়দিন পালনে গ্রাম জুড়ে উৎসব মুখোর পরিবেশ আর বাহারী সাজে সাজানো হয়েছে গির্জা। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে খ্রীষ্টান পল্লী পরিদর্শন করেন ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুল হক চৌধুরী ও পুলিশ সুপার মোঃ জোবায়েদুর রহমান।