নিউজ ডেস্ক:
তৈরি পোশাক ও জুতা বিক্রি করে এমন ১৭টি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য উৎপাদনকারীর বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে রাজি হয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ২৯ পোশাক ব্র্যান্ড তাদের সরবরাহকারী কারখানার কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করিয়ে থাকে।
নয়টি শ্রম ও মানবাধিকার সংগঠনের একটি জোটের প্রচেষ্টায় এমনটা সম্ভব হয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে শিল্পে সবার জন্য সমান সুযোগ ও ন্যূনতম মান নিশ্চিত করতে জোটটি এই উদ্যোগ নিয়েছে। জোটের সদস্যরা হচ্ছে ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন, ইন্ডাস্ট্রিঅল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইটস ফোরাম (আইএলআরএফ), ইন্টারন্যাশনাল করপোরেট অ্যাকাউন্টেবিলিটি, ওয়ার্কার রাইটস কনসোর্টিয়াম, গ্লোবাল ইউনিয়ন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন ও ম্যাকুলা সলিডারিটি সেন্টার।
রানা প্লাজা ধসের চার বছর পূর্ণ হওয়ার আগ মুহূর্তে এই জোট ৪০ পাতার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতে জানা যায়, অ্যাডিডাস, সিঅ্যান্ডএ, ডিজনি, স্পিরিট, গ্যাপ, জি-স্টার র, এইচঅ্যান্ডএম গ্রুপ, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, নাইকি, পুমা, টার্গেট ইউএসএ, ভিএফ করপোরেশনসহ ২৯ প্রতিষ্ঠান গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭২ প্রতিষ্ঠানকে তাদের সরবরাহকারী কারখানার ছয় ধরনের তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে স্বচ্ছতার অঙ্গীকার করতে চাপ দেয় জোট। শেষ পর্যন্ত ১৭ প্রতিষ্ঠান আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দেশে থাকা তাদের সরবরাহকারী কারখানার নাম ও ঠিকানা, শ্রমিকসংখ্যা, উৎপাদিত পণ্যের ধরন ইত্যাদি তথ্য নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।
এ ছাড়া পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অল্প কিছু তথ্য প্রকাশ করতে অঙ্গীকার করেছে। ১৮টি প্রতিষ্ঠান তাদের সরবরাহকারী কারখানার কেবল নাম ও ঠিকানা দেবে। সাতটি প্রতিষ্ঠান আংশিক তথ্য দিতে রাজি হয়েছে। যেমন তাদের সরবরাহকারী কারখানার একটি অংশ কিংবা তারা কোন দেশ থেকে পণ্য উৎপাদন করে সেসব জানাবে। অন্যদিকে ২৫টি পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তারা তাদের সরবরাহকারী কারখানার তথ্য প্রকাশ করবে না। তারা হয় জোটের ডাকে সাড়া দেয়নি অথবা তথ্য প্রকাশে কোনো ধরনের অঙ্গীকার করেনি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উইমেন রাইটস ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ পরামর্শদাতা অরুণা কশ্যপ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা থাকাটা সরবরাহব্যবস্থার শ্রমিকদের জন্য ভালো। মানবাধিকারের জন্যও ভালো।’ তিনি বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে আদর্শ পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য সরবরাহব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাটা হচ্ছে মৌলিক কাজ।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ পোশাকশ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারের বেশি শ্রমিক আহত হন। এ ছাড়া পাকিস্তানের আলী এন্টারপ্রাইজ ও বাংলাদেশের তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে ৩৫০ জনের বেশি শ্রমিক নিহত হন। এসব কারখানায় কোন ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠান পণ্য তৈরি করাত, সেসবের খুব একটা হদিস ছিল না। সে জন্য ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের দায়দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা।
ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইনের লবি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি কর্মকর্তা বেন ভ্যানপেপেরাস্ট্রিটি বলেন, রানা প্লাজা ধস ও অন্যান্য দুর্ঘটনার পর মানবাধিকার ও শ্রম সংগঠন এবং কিছু প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী স্বচ্ছতার গুরুত্ব অনুধাবন করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের চর্চা করে তাদের দেখাতে হবে, তারা মানবাধিকার ও শোভন কর্মপরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।