চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখানো নিয়ে বাগবিত-া
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখানো নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দুই কর্মচারীর বাগবিত-া ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ লাইনসের সামনের সড়কে অস্থায়ী মোটরযান চেকপোস্টে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের রুদ্ধদার বৈঠক শেষে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখানো নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দুই কর্মচারীর বাগবিত-া ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ লাইনসের সামনের সড়কে অস্থায়ী মোটরযান চেকপোস্টে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের রুদ্ধদার বৈঠক শেষে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। এ প্রসঙ্গে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আহসান হাবীব সময়ের সমীকরণকে বলেন, ‘তাঁরা রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁদের সিগন্যাল দিয়ে গাড়ির কাগজপত্র ও হেলমেট দেখতে চাইলে সুবাশ কুমার দাম্ভিকতা নিয়ে পুলিশকে কটাক্ষ করে বলেন, আমার কোনো কাগজপত্র লাগে না, আমি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের স্টেনোগ্রাফার। তাঁর খারাপ আচরণ সংযত করতে বললে আরও রেগে গিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলতে থাকেন। এ ঘটনা দেখে ভিডিও করতে গেলে সার্জেন্ট নবাবের ওপর হামলা করেন তিনি। এরমধ্যেই তিনি টিএসআই আমিরুলের কলার ধরে মারধর শুরু করেন। ঠেকাতে গেলে পিএসআই হাসনাইনকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন তিনি। এ অবস্থা দেখে অন্য পুলিশ সদস্যরা ছুটে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।’পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের স্টেনোগ্রাফার সুবাশ কুমার বলেন, ‘দুপুর দেড়টার দিকে অফিস থেকে মোটরসাইকেলযোগে ভিমরুল্লা যাওয়ার পথে পুলিশ লাইনসের সামনে ডিউটিরত সার্জেন্ট নবাব আমাদেরকে দাঁড়াতে বললে আমরা দাঁড়াই। এরপর তিনি কাগজপত্র দেখতে চান। তবে আমার কাছে কাগজপত্র না থাকলেও আমি বলি আমার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করা আছে, কাগজপত্র সবই আছে কিন্তু এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই। ১০ মিনিটের জন্য অফিস থেকে বের হয়েছি, আবার অফিসে যাব। আপনারা সময় দিলে আমি কাগজটি এনে দেখাতে পারি। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত একজন আমাদের জিজ্ঞাসা করেন আপনারা কী করেন। তাঁর কথার পরিপ্রেক্ষিতে রাহাতুল্লাহ ভাই বলেন, সুবাশ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে চাকরি করে, আর আমি জজ কোর্টে চাকরি করি। এ কথা শুনে তিনি বলেন, আপনারা সম্মানিত লোকের কথা বলে আকাম করে বেড়ান। তখন আমি বলি আমরা কোনো আকাম করে বেড়াই না। যদি আমাদের কাগজপত্র নিয়ে সমস্যা থাকে তাহলে কেস দেন। তিনি বলেন, গাড়ি রেখে যেতে হবে। কাগজপত্র দেখানোর জন্য একজন ২৪ ঘণ্টা সময় পায়, আমি এ কথা বললে তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে বলেন, আদালতে চাকরি করিস বলে আমাকে আইন শেখাচ্ছিস। আমি আবারও গাড়ির কেস দিতে বললে আমাদের গাড়ির চাবি নিয়ে নেন আর উত্ত্যক্ত কথা-বার্তা বলতে থাকেন।’ অপর অভিযোগকারী দামুড়হুদা সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তাদার রাহাতুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সে সময় ইজিবাইক নিয়ে কাগজ নিয়ে আসতে যেতে চাইলে ইজিবাইক চালককে তাঁরা চলে যেতে বলেন। একটা ভ্যান থামালে সেটাকেও বলে চলে যেতে বলেন। আমদেরকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না কেন, জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, টিআই স্যার আসবেন তারপরে যা, তার আগে যাওয়া যাবে না। এ কথা শুনে আমরা যখন দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন একজন কনস্টেবল পেছন থেকে কলার চেপে ধরে গালি দিয়ে সুবাশ দাদার ঘাড়ে ঘুষি মেরে দেয়। তখন সুবাশ দাদা ওখানে মুখ থুুবড়ে পড়ে যায়। পুলিশ লাইনসের সামনে তখন অনেকজন পুলিশ সদস্য ছিল, সবাই মিলে তখন কম-বেশি মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে রাস্তার এ পাশ থেকে মারতে মারতে ওপাশে নিয়ে যায়। তারপর দাদার কলার চেপে ধরে জামা খুলে নিয়ে বেল্ট ধরে পুলিশ লাইনসের ভেতরে নিয়ে যায়।’ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্টেনোগ্রাফার সুবাশ কুমার আরও বলেন, ‘আমি গাড়ি রেখে চলে যেতে চাইলে ওখানে সিভিলে থাকা পুলিশ লাইনের কিছু পুলিশ সদস্য শার্ট ও লুঙ্গি পরে এসে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে এক হয়ে আমাদের ঠেলতে ঠেলতে পুলিশ লাইনসের ভেতরে নিয়ে যায় এবং মারতে থাকে। এভাবে ২০ মিনিট ধরে আমাকে মারধর করা হয়েছে। তারপর তারা আমাকে গাড়িতে তুলে প্লাস্টিকের ব্যাগ ভর্তি কিছু লাল রংয়ের বস্তু দিয়ে মামলা দিয়ে চালান দেওয়ার কথা বলে। খবর পেয়ে আমাদের নাজির ওসমান গনি আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।’ বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম সময়ের সমীকরণকে বলেন, ‘তাঁদের মোটরসাইকেলটি রেজিস্ট্রেশনবিহীন, নম্বর নেই। একটি মোটরসাইকেল চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় চারটি কাগজের একটিও তাঁদের সঙ্গে ছিল না, বা থাকলেও তাঁরা দেখায়নি। কাগজ কোথায় জানতে চাইলে, তাঁরা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলে আমাদের চলতে কাগজ লাগে না, পুলিশরে কাগজ দেখানোর টাইম নাই। তখনো তাঁরা পরিচয় না দিয়ে উচ্চবাক্য বিনিময় করতে থাকেন। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে সুবাশ কুমারের সঙ্গে থাকা রাহাতুল্লাহ নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেন। এ অবস্থা দেখে সার্জেন্ট নবাব ঘটনাটি ভিডিও করতে করতে এগিয়ে এলে সুবাশ কুমার তাঁর ভিডিওর ওপর হামলা করেন। এরপর প্রবল বিরোধের সৃষ্টি হয় এবং বাগবিত-ার একপর্যায়ে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্যের কলার চেপে ধরেন সুবাশ। পুলিশের গায়ে হাত দিলে সেখানে থাকা অন্যরা তাঁকে পুলিশ লাইনসের ভেতরে নিয়ে যান। তখন লাইনের কিছু পুলিশ সদস্য তাঁদের মারধর করেছেন। এর আগে ঘটনার শুরুটা তাঁরাই করেছে, তাঁরা পুলিশের গায়ে হাত দিয়ে শার্টের বোতাম ছিড়ে ফেলেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসকসহ সবাই মিলে বসে প্রাথমিক একটি সমাধান পেয়েছি। তারপরও আমরা খতিয়ে দেখব, কার দোষ কেমন এবং কার কেমন বিচার করা যায়। তবে বিষয়টি আপাতত মীমাংসা করা হয়েছে।’