নিউজ ডেস্ক:
পুলিশি তৎপরতায় গত পাঁচ বছরে (২০১৩- ২০১৭) অপরাধ প্রবণতা প্রায় অর্ধেকে কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক।
পুলিশ সপ্তাহকে সামনে রেখে শনিবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি এ তথ্য জানান।
আগামী ৮ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ-২০১৮ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বার্ষিক পুলিশ প্যারেড পরিদর্শন ও সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন। এবারই প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে নৈশভোজে অংশ নিবেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (অপারেশন ও প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত আইজিপি ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারি, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, পুলিশ সদর দফতরের সহকারি মহাপুলিশ পরিদর্শক (এআইজি) সহেলী ফেরদৌস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে তুলনামূলক অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৩ সালে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৬১৩টি এবং ২০১৭ সালে ৩৩৬টি, ২০১৩ সালে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৩৯৩টি এবং ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৫৪৯টি, ২০১৩ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৪ হাজার ৩৬৯টি এবং ২০১৭ সালে ১১ হাজার ২০৩টি, ২০১৩ সালে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৮৭৯টি এবং ২০১৭ সালে ৫০৯টি।
তিনি বলেন, ডাকাতি, খুন, অপহরণ, চুরি, নারী নির্যাতন, বিস্ফোরক ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তুলনায় উদ্ধারজনিত কারণে রুজুকৃত মামলার পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে ২০১৩ সালে উদ্ধার জনিত মোট মামলা ছিল ৪৪ হাজার ৭৯৩টি এবং ২০১৭ সালে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ১৫৩টি, যা ২০১৩ এর তুলনায় দ্বিগুণ।
পুলিশ প্রধান বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত ডাকাতি, দস্যুতা, খুন ইত্যাদি অপরাধ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব ঘটনার প্রত্যেকটিতে মামলা হয়েছে এবং পুলিশ প্রায় প্রতিটি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত আসামী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, মাদক দ্রব্য ও চোরাচালানের ঘটনায় উদ্ধারজনিত কারণে মোট মামলা হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ১৫৩টি। এরমধ্যে অস্ত্র আইনে ২ হাজার ২০৮টি, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ৩৬২টি, মাদকদ্রব্য আইনে ৯৮ হাজার ৯৮৪টি, চোরাচালান দ্রব্য আইনে ৫ হাজার ৫৯৯টি। এসব মামলায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৫২৮ জন আসামী গ্রেফতার হয়েছে।
একেএম শহীদুল হক বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে পুলিশ বাহিনী ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে। জঙ্গি দমনে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল।
আইজিপি বলেন, দেশে ৩৫টিরও বেশি জঙ্গি আস্তানা চিহ্নিত করে আইনশৃংখলা বাহিনী গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এসব ঘটনায় অনেক জঙ্গি সদস্য নিজেরাই আত্মহুতি দিয়েছে এবং অনেকে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা গেছে। সারাদেশে অন্তত ৫৮ জন জঙ্গি সদস্য মারা গেছে এবং শতাধিক জঙ্গি সদস্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে।
শহীদুল হক মাদকে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যুবকদের ‘আসক্তি’কে দায়ী করেছেন । এ থেকে মুক্তি পেতে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরে সচেতন হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
জঙ্গিবাদের পাশাপাশি মাদক নির্মূলেও পুলিশ শূন্য সহনশীলতার নীতিতে রয়েছে বলে জানান পুলিশ প্রধান।
এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশের কোন সদস্যও যদি মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হবে এবং প্রচলিত আইনেই তাদের গ্রেফতার করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি জানান, পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে এবছর ১৮২জন পুলিশ সদস্য বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল, বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল-সেবা, প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল-সেবা এই চার ধরনের পদকে ভূষিত হচ্ছেন।