ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহী বাহিনীর দ্রুত অগ্রগতির প্রেক্ষিতে রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বলে পেসকভ নিশ্চিত করেছেন। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মস্কোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পেসকভ বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র রাষ্ট্রপ্রধানই নিতে পারেন। এটি পুতিনের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’ তবে তিনি আল-আসাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান এবং পুতিনের সঙ্গে তার কোনো সাক্ষাতের পরিকল্পনা নেই বলেও উল্লেখ করেন।
মস্কো থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক ইউলিয়া শাপোভালোভা বলেন, ‘রুশ কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর করেছে। আমরা এখানে দেখছি, রাশিয়া কঠিন পরিস্থিতিতে পদত্যাগী সিরীয় প্রেসিডেন্টকে ত্যাগ করেনি। আল-আসাদকে সম্ভবত লাতাকিয়ার রুশ বিমানঘাঁটি থেকে একটি রুশ বিমানে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
শাপোভালোভা আরও বলেন, সাবেক নেতাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাশিয়া ও সিরিয়ায় রুশ সম্পদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, রুশ সামরিক ঘাঁটিগুলোর ভবিষ্যৎ, বিশেষ করে লাতাকিয়ায় হিমেইমিম বিমানঘাঁটি ও টার্তুসে নৌঘাঁটির বিষয়ে।
আল জাজিরার প্রতিবেদক জানান, ক্রেমলিন তাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্কতা নিচ্ছে। তবে টার্তুস থেকে আসা প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাৎক্ষণিক কোনো হুমকির খবর নেই।
ক্রেমলিন আরও জানিয়েছে, সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব তাড়াতাড়ি হবে। পেসকভ বলেন, ‘যারা সিরিয়ায় ক্ষমতায় থাকবে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’টার্তুস ঘাঁটি রাশিয়ার একমাত্র ভূমধ্যসাগরীয় মেরামত ও রসদ কেন্দ্র এবং মস্কো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তাদের সামরিক ঠিকাদারদের আনা-নেওয়ার জন্য সিরিয়াকে ব্যবহার করে আসছে।
পেসকভ ইউক্রেনের পরিস্থিতি ও মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে একটি অস্থির সময় আসছে বলে মনে করেন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছু বিবৃতি শুনছি, যা পরস্পরবিরোধী। অন্য অঞ্চলে বাড়তে থাকা সংঘাতের সম্ভাবনা আমরা দেখছি। আমরা বলতে পারি, মধ্যপ্রাচ্য এখন জ্বলন্ত অবস্থায় রয়েছে।’
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে উদ্বেগ:
রোববার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বিদ্রোহী জোটের আকস্মিক বিজয় এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন বিশ্বজুড়ে, বিশেষত রাশিয়ার মধ্যে, গভীর বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।এই বিদ্রোহী জোটের নেতৃত্বে রয়েছে হায়াত তাহরির আল-শাম, যা একসময় আল-কায়েদার শাখা হিসেবে পরিচিত ছিল এবং এখনো জাতিসংঘ ও অধিকাংশ দেশের কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা নিজেদের আল-কায়েদার শিকড় থেকে দূরে সরানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিদেশি রাষ্ট্র ও সিরিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করার জন্য কাজ করে আসছে।
রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাশিয়া আংকারা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। তিনি আরও বলেন, অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় রাশিয়া সব দেশকে আলোচনায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। রাশিয়া, তুরস্ক এবং ইরান নিয়মিত আস্তানা শান্তি প্রক্রিয়ার আওতায় সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে আসছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আসাদের পতনে ইরান ও রাশিয়ার আঞ্চলিক প্রভাবের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি ভেঙে পড়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে আসাদের বিরোধীদের সমর্থন দেওয়া তুরস্ক শক্তিশালী অবস্থানে উঠে এসেছে। ইসরায়েল এই পরিবর্তনকে আসাদের ইরান-সমর্থিত মিত্রদের দুর্বল করার একটি ফলাফল হিসেবে দেখছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সোমবার মাউন্ট হারমনের সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের বাহিনীর ছবি প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, রাসায়নিক অস্ত্র এবং দূরপাল্লার রকেট বিদ্রোহীদের হাতে না পড়া নিশ্চিত করতে তারা সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছে। রোববার ইসরায়েল সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায় এবং দামেস্কের অস্থিতিশীলতার কারণে সীমান্তে সংঘাত ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বাফার জোনে ট্যাংক মোতায়েন করেছে। তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা সরাসরি সিরিয়ার সংঘাতে জড়ানোর কোনো পরিকল্পনা করছে না।