নিউজ ডেস্ক:
ভারতের প্রতিরক্ষায় ব্যবস্থায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (RAW) কর্মকর্তাদের। অথচ তাদের অনেক কথা অজানাই রয়ে যায়। জানা যায়, অনেক বছর পর। তেমনই এক RAW কর্মকর্তার নাম রবিন্দর কৌশিক।
পাকিস্তানের চোখে ধুলো দিয়ে যিনি দিনের পর দিন অন্দরমহলের সব গোপন তথ্য তুলে দেন ভারতের হাতে। তাঁর বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তবে বছরকয়েক আগে দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
ছেলেবেলা থেকেই অভিনয়ে দক্ষতা ছিল রবিন্দরের। আর সেইসঙ্গে আগ্রহ ছিল উর্দু ভাষায়। সেইজন্যই ঘটনাচক্রে RAW বেছে নিয়েছিল তাঁকে। জানা যায়, উর্দু শিখেছিলেন তিনি। মুসলিম ধর্মগ্রন্থের পাঠও নিয়েছিলেন ট্রেনিং চলাকালীন। সবটাই বেশ দক্ষতার সঙ্গে রপ্ত করেছিলেন রবিন্দর।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে তাঁকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তাঁর নতুন নাম হয় নবি আহমেদ শাকির। তাঁর ভারতীয় হওয়ার সমস্ত প্রমাণ পুড়িয়ে ফেলা হয়। করাচি ইউনিভার্সিটিতে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। এরপর যোগ দেন পাকিস্তান আর্মিতে। সেখানেও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে মেজর হয়ে যান তিনি। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন তিনি। আর সেইসময় ভারতের হাতে তুলে দেন একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাঁর এই সাহসিকতার জন্য তাঁকে ‘দ্য ব্ল্যাক টাইগার’ আখ্যা দেওয়া হয়।
১৯৮৩ সালে ধরা পড়ে যান তিনি। ভারত থেকে ইনয়াত মাসিহা নামে এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেইসময়ই ধরা পড়েন যান রবিন্দর। শিয়ালকোটের জেলে দু’বছর ধরে অকথ্য অত্যাচার চলে তাঁর উপর। ১৯৮৫ তে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে সেই শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তিত হয়ে যায়। অনুমান করা হয়, ২০০১ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় রবিন্দরের। জেলে থাকাকালীন তাঁর পরিবারকে গোপনে চিঠি লিখতেন বলে জানা যায়। সেখানেই পাক সেনার নারকীয়তার কথা জানান তিনি। রবিন্দর কৌশিকের ভাই ও মা অমলাদেবী ছেলেকে বাঁচানোর জন্য প্রচুর চিঠি লিখেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে। চিঠি লেখেন লালকৃষ্ণ আদবানী সহ বহু নেতা-নেত্রীকে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। ২০০৬ সালে মৃত্যু হয় অমলাদেবীর।
শোনা যায়, অমলাদেবীর মৃত্যুর আগে বাজপেয়ী তাঁকে একটি চিঠি লিখে জানান, যদি রবিন্দর কৌশিক ধরা না পড়ত তাহলে আরও সিনিয়র পাক আর্মি অফিসার হয়ে যেত আর সারাজীবন ভারতকে সাহায্য করত।
সূত্র: কলকাতা টোয়েন্টিফোর