বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫

পণ্য চালান দ্রুত খালাসকরণ বিধিমালা বাস্তবায়নে বাধা আন্দোলনকারীরা!

দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতকে গতিশীল করার জন্য ‘পণ্যচালান দ্রুত খালাসকরণ বিধিমালা-২০২৪’ বাস্তবায়ন করতে চায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জাতীয় রাজস্ব বিভাগ। সিঅ্যান্ডএফের সঙ্গে জড়িত কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এর বিরোধিতা করে গত ১৫ জুলাই থেকে আন্দোলন করছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায়। এর ফলে বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, আন্দোলনকারীদের অনেকেই সহিংসতা সৃষ্টি করে সরকারি কর্মচারী ও কাস্টমস বিভাগে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের মারধর করেছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস ও নগদ অর্থ ছিনতাইয়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে। জরুরি পণ্য আমদানি-রপ্তানি এবং আন্তর্জাতিক এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিসের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বিষয়টিকে বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন।

আন্তর্জাতিক এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য স্যাম্পল প্রোডাক্ট বা নমুনা পণ্য আনা নেওয়া করা হয় আন্তর্জাতিক এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিসের মাধ্যমে। গ্রাহকের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও ভোগান্তি হ্রাসের কথা বিবেচনা করে জরুরি পণ্য, জরুরি ওষুধ, নমুনা পণ্য, উপহারসামগ্রী স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দ্রুত খালাস করা যাবে। তিনি বলেন, মানুষ প্রত্যাশা করে পণ্যটি দ্রুত খালাস হোক। পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সরকার এ দীর্ঘসূত্রতা দূর করার জন্য ৩০ কেজির নিচের পণ্য স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে খালাস করতে চায়। এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস নিজেদের দায়িত্বে কাস্টমস সিস্টেমে পেমেন্ট জমা দিয়ে দ্রুত খালাস করতে পারবে। এটি এমন এক প্ল্যাটফরম, যেখানে সব পক্ষ স্বচ্ছ পদ্ধতিতে দেখতে পারবে পণ্যটির অবস্থান। ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে পেমেন্ট দেওয়ার ফলে সরকার যথাযথ রাজস্ব পাবে। রাজস্ব বিভাগও দেখতে পারবে পণ্যটির সর্বশেষ অবস্থান। এ কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকার যখন তা বাস্তবায়ন করতে শুরু করল তখন সিঅ্যান্ডএফের পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টি করা হলো। তারা এটিকে কালো আইন বলে বিরোধিতা করছে।

এ বিষয়ে কথা হয় সিঅ্যান্ডএফের সভাপতি মিজানুর রহমানের সঙ্গে।

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিকে কালো আইন কেন বলছেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দ্রুত পণ্য খালাস হোক, এটি আমরাও চাই। ৬৬ বছর ধরে এ কাজ সিঅ্যান্ডএফ করে আসছে। সিঅ্যান্ডএফকে বাদ দিয়ে এয়ার সার্ভিস পোস্টালের নিবন্ধনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পণ্য খালাস করানোর বিরোধী আমরা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজটি অন্য গ্রুপের হাতে উঠিয়ে দেওয়ার ফলে এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

সিঅ্যান্ডএফের মাধ্যমে অনেক গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন এবং এসব বিষয়ে অনেক অভিযোগ আছে এবং অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক মামলাও হয়েছে, এটি কীভাবে দেখছেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকতেই পারে। কারণ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অনেক সময় মিথ্য তথ্য দেয়। জানতে চাইলে সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবু হানিফ বলেন, মূল সমস্যা হলো আমরা ৮ থেকে ১০ হাজার কর্মচারী বছরের পর বছর কাজ করছিলাম। কিন্তু নতুন যে পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, তাতে কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীরা পণ্য খালাসে অংশ নেবে। এটি মেনে নেওয়া যায় না। এতে বৈষম্য তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, সিঅ্যান্ডএফের আন্দোলনের ফলে সারা দেশে চলমান জাতীয় সংকটের মধ্যে নতুন করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও গ্রাহকরা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অনেকেরই সিঅ্যান্ডএফে কাজ করার প্রকৃত নিবন্ধন নেই। তাদের কেউ কেউ সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছেন এবং নগদ অর্থের জোগান দিচ্ছেন। কাস্টমস বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছেন। কাস্টমস হাউসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের ওপর হামলা, মারধর, নগদ অর্থ ও মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের দ্বারা অমানবিক নির্যাতন ও হামলার শিকার হওয়া অন্তত তিনজনের সন্ধান পাওয়া গেছে।

তাদের একজন মো. ইলিয়াস আলী, ফেয়ারডিল শিপিং লিমিটেডের সুপারভাইজার। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফরোয়ার্ডিংয়ের কাজ করেন। তার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য গত ১৫ জুলাই গিয়েছিলেন বিমানবন্দর থানাধীন কাস্টমস হাউসে। সেদিন আনুমানিক দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে কাস্টমস হাউসের মূল ফটক দিয়ে ঢোকার পথে মো. ইলিয়াস আলী ও তার দুই সহকর্মী আরিফ হোসেন এবং কামাল হোসেনের ওপর হামলা করেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া দুর্বৃত্তরা। সেদিন কাস্টমস হাউসের ভেতরে প্রবেশই করার সময় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, মো. ইলিয়াস আলীসহ তার দুই সহকর্মীকে ব্যাপক মারধর করে। মো. ইলিয়াস আলীর মুখমন্ডলে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা মো. ইলিয়াস আলীর কাছে থাকা ৭২ হাজার টাকা ও একটি আইফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা সে সময় পালিয়ে যায় বিধায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মো. ইলিয়াস আলী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানায় অভিযোগ করেন।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular