নিউজ ডেস্ক:
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন এবং মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার পর অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জনের ঘটনাবলী ধ্বণিত হলো প্রবাস প্রজন্মের কণ্ঠে। পাশ্চাত্যে জন্মগ্রহণকারী বাঙালি প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর সাথে পরিচিত রাখা তথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী সম্পর্কে তাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরির মধ্য দিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য লালনের অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হলো ‘বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০১৭’ উদযাপন উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান থেকে।
রবিবার দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানমালায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত শতাধিক শিশু অংশ নেয়। শিশুদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন। এক সময় তা পরিণত হয় শিশুমেলায়।
শুরুতে সকাল সাড়ে ১০টায় উপস্থিত শিশুদের রেজিস্ট্রেশনের পর বেলা ১১টায় চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার সূচনা করা হয়। বয়সের ভিত্তিতে শিশুদের ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। ‘ক’ গ্রুপের চিত্রাঙ্কনের বিষয় ছিল ‘বাংলা বর্ণমালা’ আর ‘খ’ গ্রুপের ‘শহীদ মিনারে প্রভাত ফেরী’। রংতুলি আর বর্ণিল সাজে আয়োজিত এ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন কিংস বোরো কমিউনিটি কলেজের আর্ট প্রফেসর চিত্রশিল্পী জেমী উইলকিনসন, ফাউন্ডেশন ফর আর্ট এন্ড মেমরীর পরিচালক চিত্রশিল্পী জ্যাক স্যাল এবং স্থানীয় চিত্রশিল্পী লেইন উইটকম। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শেষে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি কুইজ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সমেবেত শিশুরা। কুইজের প্রশ্নোত্তরে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের জানার অপূর্ব সুযোগ হয়। বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত এই নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী এসব শিশুর প্রায় সকলেই বাঙালির স্বাধীকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবিস্মরণীয় ভূমিকার ব্যাপারে ধারণা রাখে বলে প্রতিয়মান হয়েছে। আর এমন প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতেই বাংলাদেশ মিশন বিষয়ভিত্তিক কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বলে মিশনের প্রধান রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তার স্বাগত বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে জাতির পিতাকে বছরের প্রতিটি দিনই স্মরণ করতে হবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। জাতির পিতার জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানানোর অভিপ্রায়ে আজকের সকল আয়োজন শিশুদের ঘিরেই করা হয়েছে”।
‘ক’ গ্রুপে ২য় গ্রেডের ছাত্রী তাসনিয়া নুর এবং ‘খ’ গ্রুপে ৭ম গ্রেডের ছাত্রী নওশিন রহমান প্রথম স্থান অধিকার করে। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে “বঙ্গবন্ধু ক্রেস্ট” প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় ৪৮ জন শিশু অংশগ্রহণ করে।
মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে বেলা ২টায় শুরু হয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মূল পর্ব – আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্বের শুরুতে জাতির পিতার জীবনাদর্শ তুলে ধরে একটি প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশিত হয়। এতে জাতির পিতার নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা অর্জন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের সাথে আন্তর্জাতিক ও কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপনে জাতির পিতার ভূমিকার বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম -এর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সন্তানদের আরও বেশী জাতির পিতার জীবন ও কর্মের বিষয়ে জানানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “যে দেশের সাথে নাড়ীর বন্ধন, যে দেশে বাপ-দাদার ভিটা, সে দেশের প্রকৃত ইতিহাস প্রবাসের প্রজন্মকে জানাতে হবে। বাঙালি বীরের জাতি। আমাদের রয়েছে বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। এসকল ইতিহাস তুলে ধরে তাদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে”।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি বলেন, “মার্চ মাস বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মমাস। এ কারণে এবং শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অগাধ ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর জন্মদিনটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন”। বাংলাদেশ শিশু একাডেমী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্মের আলোকে যে ২৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো এই মিশনসহ বিশ্বের সকল মিশনের মাধ্যমে প্রবাস প্রজন্মের কাছে বিলি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান সচিব নাসিমা।
পরে স্থানীয় একটি ব্যান্ড দল ‘মাটি’, ম্যানহাটান বাংলা স্কুল ও বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতনের শিশু শিল্পীসহ স্থানীয় বাঙালি কমিউনিটি, বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেটের কর্মকর্তা-কর্মচারির সন্তানদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তারা জাতির পিতাকে নিয়ে গান, দেশের গান, মুক্তিযুদ্ধের গান ও রবীন্দ্র সঙ্গীত, বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম নিয়ে কবিতা আবৃতি, সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে।