নিউজ ডেস্ক:
জাকির খানের ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে আগামী ২২ জুন বৃহস্পতিবার ব্রঙ্কস সুপ্রিম কোর্টের সামনে বড় ধরনের শো-ডাউনের প্রস্তুতি চলছে। ‘ইউনাইটেড বাংলাদেশী ফর জাকির এ খান’ নামক একটি ব্যানারে ১৮ জুন গতকাল রোববার দুপুরে জ্যাকসন হাইটসে ‘ইদ্যাদি গার্ডেন’-এ অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে আরো জানানো হয় যে, এর মধ্য দিয়ে কমিউনিটিকে জানান দিতে হবে যে, বাংলাদেশী কাউকে আক্রমণ করলে রেহাই পাওয়া যাবে না। জাকিরের মত আর কেউ যাতে অকালে ঝরে না পড়েন, সে জন্যে এই কর্মসূচিতে সকলের উপস্থিতি কামনা করা হয়।
ইতিমধ্যেই ব্রঙ্কসে আক্রান্ত প্রায় সবকটি ঘটনার দুর্বৃত্তরা গ্রেফতার হয়েছে। হেইট ক্রাইমের ভিকটিমরা যদি সাথে সাথে পুলিশকে সবকিছু খুলে বলেন তাহলে দুর্বৃত্তদের শাস্তি নিশ্চিত করা সহজ হয়। সর্বশেষ কামালউদ্দিন (৩৯) নামে বাংলাদেশী এক ইমাম ১৫ জুন ব্রঙ্কসের ক্যাসেলহিল ইউনিয়ন পোর্ট এলাকায় ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলার শিকার হলেও বিষয়টি পুলিশকে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করা হয়নি।
‘ফোন্স ক্লাব’ নামক একটি স্টোরের সিসিটিভি দেখে দুই দুর্বৃত্তকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। এ ধরনের হামলা প্রায়ই ঘটছে বলেও উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
উল্লেখ্য, গত ২২ ফেব্রুয়ারি অপরাহ্নে নিজ বাসার সামনে তাহা মেহরান (৫১) নামক এক পাকিস্তানীর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুন হন জাকির খান। ঐ পাকিস্তানী নিজেই পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে জানিয়েছেন যে, ৯/১০ মাস যাবত বাড়ির ভাড়া না পেয়ে তিনি ভাড়াটে জাকিরকে হত্যা করতে বাধ্য হন।
হোস্ট সংগঠনের সদস্য সচিব ও জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জেড চৌধুরী জুয়েল বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে এই হত্যাকান্ডের বিচার শুরু হবার কথা ২২ জুন সকাল ৯টায়। এজন্য আমরা ঐ সময়ে যত বেশী সংখ্যক সম্ভব প্রবাসী জড়ো হতে চাই। তাহলে আদালতে বিচারটি গুরুত্ব পাবে। ’
নিউইয়র্ক অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী বলেন, ‘ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্যে আমরা সর্বস্তরের প্রবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি যথাসময়ে ব্রঙ্কস সুপ্রিম কোর্টের সামনে জড়ো হবার জন্যে। ’
কম্যুনিটি লিডার সিরাজ উদ্দিন সোহাগ বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা শুধুমাত্র জাকির খানের হত্যাকান্ডের বিচার ইস্যুতে মাঠে নেমেছি। তবে তার পরিবার যদি কোন ধরনের সহায়তা চায় তাহলে আমরা সে উদ্যোগ নিতেও পিছপা হবো না। ’ এ সময় সেখানে জাকির খানের বড়ভাই নাদির খানও ছিলেন।
এদিকে ১৮ জুন রোববার প্রাপ্ত সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রঙ্কসে চার দুর্বৃত্তের ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলার শিকার বাংলাদেশী ইমাম কামাল উদ্দিন মুন্সী এ সংবাদদাতাকে জানান, দাঁড়ি-টুপি-পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ছিলাম বলেই হিসপ্যানিক যুবকেরা আমার ওপর হামলা করে। সে সময় মুসলমানদের সম্পর্কে অকথ্য গালাগালিও করেছে তারা। যুবকরা আমার মুখ ও মাথায় এলোপাথারি কিল ঘুষি মেরে মারাত্মক জখম করে।
ভিকটিম কামাল উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার ইফতার শেষে বাংলাবাজার জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে ওই মসজিদের খতীব মাওলানা আবুল কাশেম এয়াহিয়াকে সঙ্গে নিয়ে স্টারলিং-বাংলাবাজারের প্রিমিয়াম সুইটস অ্যান্ড রেষ্টরেন্টে চা খেতে যান। সেখান থেকে একা বাসায় যাওয়ার পথেই এই হামলার শিকার হন।
ইউনিয়ন পোর্ট রোডের উপরে একটি সাদা প্রাইভেট কার থেকে আকস্মিকভাবে দু’যুবক তার উপর হামলা করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরো দু’যুবক তাদের সাথে যোগ দিয়ে হামলার তান্ডবে মেতে ওঠে। তাদের উপর্যপুরি আঘাতে গুরুতর আহত হন তিনি। এসময় তার আর্তচিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসলে দু’যুবক প্রাইভেট কার নিয়ে পালিয়ে যায়। অন্য দু’যুবক ইউনিয়ন পোর্ট রোডের বাংলাদেশীয় মালিকানার একটি মোবাইল ফোন দোকানে ঢুকে পড়েন। এসময় পুলিশে কল করা হয় এবং আহত কামাল উদ্দিন লোকজন নিয়ে হামলাকারীদের শনাক্ত করার জন্য ঐ দোকানে গেলে দু’যুবক আবারও সবার সামনে তার ওপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশ এসে ওই দু’যুবককে আটক করে নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ জুন (পবিত্র রমজানে) ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার ম্যাগ্রো এভিনিউর মসজিদে তারাবীর নামাজে যাওয়ার সময় বাংলাদেশি আতিক আশরাফের মারাত্মক জখমের ঘটনাসহ আরো বেশ ক’টি ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তাদের আতঙ্ক ও ক্ষোভের কথা জানান পুলিশ অফিসারকে। কয়েকজন মুসল্লী জানান, তারা এখন পায়জামা-পাঞ্জাবী পরতে রীতিমত ভয় পান।
এদিকে, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ব্রেকার্সফিল্ডে গত ১২ জুন ভোরে বন্দুকের গুলিতে নিহত মোস্তাফিজুর রহমান সেন্টুর ঘাতক এখনও শনাক্ত হয়নি বলে সেন্টুর ক্ষুব্ধ আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন।