নিউজ ডেস্ক:
নব্য জেএমবিতে যোগ দেওয়ার পরই এর সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর খুব আস্থাভাজন ও স্নেহধন্য হয়ে ওঠেন মো. আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ ওরফে আবু হাররা (২৪)। গুলশানে হামলার জন্য প্রাথমিকভাবে তাকে নির্বাচিত করা হলেও পরে তাকে বাদ দেন তামিম চৌধুরী।
নব্য জেএমবিতে র্যাশের কোন পদ ছিল না, তারপরও তিনি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। এমনকি তাকে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তামিম চৌধুরীর।
গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মো. আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ ওরফে আবু হাররাকে (২৪) গ্রেপ্তারের পর এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পুলিশ।
এর আগে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নাটোরের সিংড়া বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে র্যাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায়। নাটোর থেকে বিকেলে র্যাশকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
গুলশান হামলায় র্যাশের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গুলশান হামলার আগে নব্য জেএমবির নেতা ছোট মিজান ও র্যাশকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় অস্ত্র আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা আমের ঝুড়িতে করে পিস্তল, গুলি, ম্যাগজিন কল্যাণপুরের আস্তানায় নিয়ে আসে। কল্যাণপুর থেকে বাসারুজ্জামান চকলেট অস্ত্রগুলো বসুন্ধরার আস্তানায় হামলাকারীদের কাছে পৌঁছে দেয়। বসুন্ধরার আস্তানায় সকল ফার্নিচার কেনা হয় র্যাশের মাধ্যমে। আজিমপুরে আস্তানার জন্য বাসাটিও ভাড়া নেওয়া হয় র্যাশের মাধ্যমে।
এছাড়া, হলি আর্টিজানে হামলাকারীদেরকে গতবছর রমজান মাসের আগে কোন একদিন বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে এক এলাকায় নিয়ে যান র্যাশ। কীভাবে গ্রেনেড ছুড়তে হয়, তাদেরকে সে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নদীতে গ্রেনেড ছুড়ে এ প্রশিক্ষণ দেন র্যাশ। এ সময় গুলশানে অন্যতম হামলাকারী রোহান ইমতিয়াজের পায়ে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার লাগে। তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছিলেন র্যাশ।
আবু হাররা নব্য জেএমবিতে যোগ দেন খালেদ নামের এক জঙ্গির মাধ্যমে। ২০১৬ সালে তিনি ঢাকায় আসেন। ওই বছর রমজানের শুরুর দিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। গুলশানে হামলাকারীরা যখন কথিত হিজরতের নামে বাসা ছাড়ে তখন তাদেরকে রাশেদ অভ্যর্থনা জানিয়ে মিরপুরে আস্তানায় নিয়ে যেতেন।
জঙ্গিদের নিজেদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি : বিভিন্ন অভিযানে জঙ্গি সদস্যরা নিহত ও গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে নব্য জেএমবির সদস্যদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, সংগঠনে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে শনাক্ত করে জঙ্গি নেতারা তাদের অন্তত ৫ জন সদস্যকে নিজেরাই হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, আস্থার ঘাটতির কারণেই জঙ্গিরা এখন আর সংগঠিত হতে পারছে না। অবিশ্বাস থেকেই তাদের মধ্যে এই কলহ শুরু হয়েছে। ওরা মনে করে তাদের সংগঠনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ বা অন্য কোন শত্রু ঢুকে পড়েছে। এই আস্থার অভাব ও অবিশ্বাসের কারণে তারা বড় ধরণের কোন হামলা পরিচালনার সক্ষমতাও হারিয়েছে।