হবিগঞ্জ সংবাদদাতা: শিক্ষক সংকটের কারণে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ৯২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই উপজেলার ৪৩টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বিহীন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে ৪৯ টি। সব মিলিয়ে ওই উপজেলার ১৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯২ টি বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষক সংকট রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার ১৪টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় ওই এলাকার কোমলমতি শিশু-কিশোররা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা রয়েছে ১৮২টি। গত বছরে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মোট ৪৩ হাজার ৩ শত ৭১ জন। এরই মধ্যে ছাত্র ২১ হাজার ৩৬ জন, ছাত্রীর সংখ্যা ২২ হাজার ৩ শত ৩৫ জন। এছাড়াও বেসরকারী তথ্য সুত্রে আরো জানা গেছে, ভর্তির উপযোগী বিরাট একটি অংশ ভর্তির সুযোগ-সুবিধা থেকে রয়েছে বঞ্চিত। কেউ কেউ বিভিন্ন প্রাইভেট বা বেসরকারী প্রতিষ্টানে ভর্তি হলেও অনেকেই ঝড়ে পরেছে। উপজেলার ১৮২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৩টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে ৪৯ টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ এখনও খালি রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের শূন্যতা ও শিক্ষক সংকটের কারণে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সারা দেশে সকালের শিফটে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং দিনের শিফটে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কোনো বিদ্যালয়ে একজন বা দুজন শিক্ষক থাকায় তাঁদের পক্ষে এক সঙ্গে তিনটি ক্লাস নেয়া সম্ভব হয় না। ক্লাস ছাড়াও শিশু জরিপ, উপবৃত্তি তথ্য সংগ্রহসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের নানা তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় শিক্ষকদের। শুধু তাই নয় দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে গেলে পাঠদান মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এ কারণে পাঠদান ঠিকমতো না হওয়ায় অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আসা বন্ধ করে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেক সচেতন অভিভাবকগন। একদিকে শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে যারা আছেন তাঁরাও নিয়মিত বিদ্যালয়ে না যাওয়ায় এবং ধারাবাহিকভাবে পাঠদান না করায় শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বাড়ি অন্য উপজেলায় হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে স্কুলে পৌছা সম্ভব হয়নি। এদিকে সম্প্রতি বদলীর জটিলতা খোলার পর শিক্ষকরা তাদের পচন্দের স্কুলে যাওয়ার জন্য উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে ধর্ণা দিতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন সময় কাটাচ্ছেন। ফলে পাঠদান আরো ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্চুক ভারপ্রাপ্ত এক প্রধান শিক্ষকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য থাকায় প্রায়ই দাপ্তরিক কাজে উপজেলায় যেতে হচ্ছে। এতে শিক্ষক এর ঘাটতি পুষিয়ে নিতে কষ্ট সাধ্য হয়ে দাড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিয়াউল হক জানান, উপজেলা ৪৩টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে। তাদের তালিকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে।