পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অনাস্থা ভোটে হেরে গেছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ের। ফলে সরকারপ্রধানের পদে নিয়োগ পাওয়ার মাস তিনেকের মাথায় সরে যেতে হচ্ছে তাকে।
কিছুদিন ধরেই ফ্রান্সে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছিল। এতে চাপে ছিল মিশেল বার্নিয়ের সরকার। দেশের পরবর্তী জাতীয় বাজেট পাস করানো নিয়ে এ সংকট আরও জটিল হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিরোধী আইনপ্রণেতারা সরকারের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব তোলেন। সেই ভোটে সরকার ধরে রাখতে পারেননি মিশেল। ৫৭৭ জন এমপির মধ্যে ৩৩১ জন তার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফলে ভেঙে পড়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে মিশেল বার্নিয়ারকে।
মিশেল ছিলেনফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁপন্থী রাজনীতিবিদ। তার নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হয়েছিল, তা ছিল ম্যাক্রোঁপন্থী সরকার। বুধবারের ভোটের পর বামপন্থী দলগুলি মাক্রোঁর পদত্যাগ দাবি করতে শুরু করেছে। তাদের বক্তব্য, এই ভোট থেকে পরিষ্কার ম্যাক্রোঁর প্রতিও পার্লামেন্টের সমর্থন নেই।
গত ৫ সেপ্টেম্বর মিশেলকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন ম্যাক্রোঁ। ১৯৫৮ সালে পঞ্চম রিপাবলিক তৈরি হওয়ার পর এই প্রথম এত কম সময় কোনো প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকলেন।
কে হবে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী : ফরাসি পার্লামেন্টে এক কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কোনো ব্লকের হাতেই সরকার গঠনের মতো যথেষ্ট শক্তি নেই। যার ফলে পার্লামেন্ট হাং হয়ে গেছে। এদিকে গরমের আগে আবার নির্বাচনও সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে যে-ই ক্ষমতায় আসবে তারই অবস্থা মিশেলের মতো হবে। আস্থাভোট হলেই তাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। অর্থাৎ, সকলকেই সংখ্যালঘু সরকারের দায়িত্ব নিতে হবে। ফলে দ্রুত এই সমস্যার মীমাংসা হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই সমস্যার সমাধান না হলে নতুন প্রধানমন্ত্রী পাওয়া মুশকিল।
ম্যাক্রোঁ অবশ্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম দ্রুত বলতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তার ভাষণ দেওয়ার কথা। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার ফরাসি সময় রাত ৮টায় টেলিভিশনে ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্ট। বুধবারই তিনি সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন। তবে ম্যাক্রোঁ পরবর্তী কর্মসূচি কী ঘোষণা করবেন, সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি প্রাসাদ।
অতি দক্ষিণপন্থীদের বক্তব্য : বামপন্থিরা ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ দাবি করলেও অতি দক্ষিণপন্থী নেত্রী লে পেন এখনই ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ দাবি করছেন না। তার বক্তব্য, বুধবারের ভোটকে তারা জয় হিসেবে দেখছেন না। আর কোনো উপায় ছিল না বলেই বুধবার ভোটের সামনে সরকারকে দাঁড় করাতে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। তার বক্তব্য, এই সমস্যা থেকে বার হওয়ার এখন একটাই পথ খোলা রয়েছে, নতুন করে ভোটের ব্যবস্থা করা। লে পেন মনে করেন, ম্যাক্রোঁও আর বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।