নিউজ ডেস্ক:
নতুন বছর আসলেই মনের অজান্তেই হোক বা সজ্ঞানেই হোক নতুনভাবে জীবনকে নিয়ে আমরা ভাবি।
পুরোনো বছরের সব অপ্রাপ্তি ভুলে নতুন বছরকে সাজাতে শুধু ভাবলেই হবে না, নিতে হবে কিছু পদক্ষেপ। সামান্য কিছু পদক্ষেপ বদলে দিতে পারে জীবনের গতিপথ।
নিজেকে ভালোবাসুন : নিজেকে ভালোবাসুন। নিজেকে ভালোবাসা মানে, আপনি যেমন সেভাবেই নিজেকে গ্রহণ করুন। আপনার চেহারা, গায়ের রঙ যেমনই হোক তা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগবেন না। এই পৃথিবীতে আপনি একজনই, আপনার মতো কেউ নেই। তাই নিজের ওপর ভরসা রাখুন ও নিজেকে ভালোবাসুন। মনে রাখবেন, নিজেকে ভালোবাসা মানেই অন্যের ক্ষতি করে নিজের সব ঠিক রাখা নয়। স্বার্থপরতা ও নিজের প্রতি ভালোবাসা দুইটা আলাদা বিষয়।
নিজের সম্পর্কে সঠিক ধারণা করতে শিখুন : নিজেকে বড় ভাবা অহংকারের পরিচয়। আর নিজেকে ছোট ভাবাও বোকামি। নিজের সম্পর্কে সঠিক ধারণা করতে শিখুন। আপনার নিয়ত, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন, চিন্তা ভাবনা আপনিই সবচেয়ে ভালো জানেন অন্যের চেয়ে। তাই নিজেকে জানুন। নিজের প্রতি সঠিক ধারণা করে নিজের প্রতি সুবিচার করুন।
আত্মসম্মান বোধের বিকাশ : সম্মান যেমন যেকোনো সম্পর্কের অলংকারস্বরুপ ঠিক তেমনি আত্মসম্মান যেকোনো ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের অপরিহার্য অংশ। আত্মসম্মানহীন বা মর্যাদাহীন মানুষকে অন্য মানুষরা গোনায় ধরে না, নানাভাবে অপমান করে। যদিও এমন ব্যবহার মানবিকতার বিপক্ষে। তবুও নিজের আত্মসম্মান আছে এটা অন্যকে বুঝিয়ে দিন। নিজেকে বার বার অন্যের অপমানের পাত্র করবেন না। ভালোবাসার নামে, কাউকে ভালোবাসলে আমরা নিজের আত্মসম্মানকে ভুলে শুধুই ভালোবাসি বা অন্যের অপমান সহ্য করি। মানুষ একে ভালোবাসার প্রকাশ ভাবে না, ভাবে দূর্বলতা। তাই নিজের আবেগ বা ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সম্মান করুন। আত্মসম্মান থাকলে কেউ আপনাকে নিয়ে বা আপনার আবেগ নিয়ে দিনের পর দিন অপমান করতে পারবে না।
ইগো থেকে বেঁচে থাকুন : অনেকেই আত্মসম্মান আর ইগোকে মিলিয়ে ফেলেন। দুইটা সম্পুর্ণ ভিন্ন দুইটি বিষয়। আত্মসম্মান অন্যের কাছে নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করে আর ইগো তুচ্ছ বিষয়েও আপনাকে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিবে।
‘না’ বলতে শিখুন : জীবনের চলার পথে এমন অনেক পরিস্থিতি আসবে, যেখানে না বলতে হবে। না বলা মানেই নয়, আপনি ভালো না, আপনার যোগ্যতা কম। কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সম্পর্কে যা আপনি নন, যা আপনি করতে পারবেন না, যা আপনার মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না। সেখানে কোনো প্রকার অপরাধবোধ ছাড়া না বলুন। না বলার সময় কন্ঠে দৃঢ়তা থাকবে কিন্তু অন্যের কথা বা প্রস্তাবে কোনো অবজ্ঞা বা বেয়াদবি প্রকাশ করবেন না। অন্যের কথার সঙ্গে একমত না হন, কাজ করতে না পারুন বুঝিয়ে বলুন।
রাগকে নিয়ন্ত্রণ করুন : মান অভিমান, রাগ মানব চরিত্রের অংশ। রাগ ছাড়া মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। কিন্তু অতিরিক্ত রাগ ধ্বংসের কারণ। কথায় আছে- রাগ করলেন তো হেরে গেলেন। তাই রাগের নিয়ন্ত্রণ খুব প্রয়োজন। দার্শনিক সেফটিস বারি বলেন- রাগকে শাসন না করা হলে রাগই সম্পূর্ণ মানুষটাকে শাসন করে। অন্য একটি প্রাচীন প্রবাদে আছে- যে লোক রাগতে জানে না সে মূর্খ্য, কিন্তু যে রাগ করে না সে বুদ্ধিমান।
সঞ্চয়ী হোন : গ্রামগঞ্জে একটা কথা আছে- সময় থাকতে রেখে খাও, বেলা থাকতে হেঁটে যাও। এর মানে উপার্জনের সময় টাকা খরচ না করে কিছু রেখে দাও। অসময়ে কাজে দিবে। অসময়ের বন্ধু হচ্ছে সঞ্চয়। নয়তো বিপদের সময় অন্যের কাছে হাত পাততে হবে। দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলেন- দান করা মহত্ত্বের লক্ষণ আর তা গ্রহণ করা নীচতা। তাই কারো কাছে হাত পাতার চেয়ে সময় থাকতে খরচের সঙ্গে সঞ্চয়ের হিসাব রাখা উচিত।
নিজের কাজে সৎ থাকুন : নিজের কাছে আর নিজের কাজে সৎ থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় সফলতা। সমাজ, দেশের উপকার করার জন্য আর্থিক আর শারীরিকভাবে সামর্থ্য সবার নাও থাকতে পারে। কিন্তু নিজের কাছে, নিজের কাজের ক্ষেত্রে সততা দেখাতে পারে যে কেউ। ভুললে চলবে না, আমরা যাই করি না কেন এর প্রভাব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই সমাজ আর দেশের ওপর-ই পড়ে। বছরের প্রথম থেকেই এই ব্যাপারে সচেতন হোন।
অনুকরণ নয় : জীবনের নানা ক্ষেত্রে বহু মানুষের কাজ বা জীবনদর্শন আমাদের মুগ্ধ করে, করে অনুপ্রাণিত। ইচ্ছে হয় তাদের মতো হই, তারা যেভাবে কাজ করে সেভাবেই কিছু করি। জীবনে কাউকে আদর্শ ঠিক করা দোষের না। বরং তা লক্ষ্য পূরণে অনুপ্রেরণা হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে খুব কাজে দেয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অনুসরণ কাউকে করলেও কখনো কাউকে বা কারো কাজকে অনুকরণ নয়। নিজের নিজস্বতা যেন কখনো না হারায় কোনো কাজে। কারো ভালো কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হলেন, ভাবলেন সেই কাজটাই করবেন। করেন, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু করার আগে নিজের চিন্তা, কল্পনা, ভালোলাগাগুলো নিয়ে ভাবুন। কে জানে, যাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তার কাজের চেয়েও আপনার ভাবনাটা বেশি সৃজনশীল, বেশি কার্যকর। তাই যাই করুন, নিজের মতো করে করুন। আপনার নিজস্বতাই আপনার পরিচয়।
নিজেকে সময় দিন : অন্যকে পিছনে ফেলার তাগিদে বা সাফল্য পাওয়ার আশায় আমরা ছুটে চলছি প্রতিনিয়ত। দিন দিন মানুষ ব্যস্ত থেকে আরো ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে প্রাপ্তির বদলে কোথায় যেন এক ধরনের অস্থিরতা আর ক্লান্তি। সব কিছুর পিছনে ছুটতে ছুটতে নিজেকেই যেন হারিয়ে ফেলছি আমরা। নিজের ভালোলাগাগুলো আজ চাকচিক্যময় ব্যস্ত জীবনের আড়ালে হারাতে বসেছে। অনেকক্ষেত্রে আমরা নিজেরাও বুঝি না, বুঝলেও সেই অস্থিরতাকে সফলতা দিয়ে ঢেকে নিজেদেরই বোকা বানাই। তাই অস্থিরতা, ক্লান্তি, ভালো না লাগা পিছু ছাড়ে না আমাদের। তাই নতুন বছরে শত ব্যস্ততার মাঝে, সফলতার পিছনে ছুটতে ছুটতে নিজেকে একটু সময় দিন। এই সময় শুধুই আপনার।
সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন : প্রার্থনা করুন। প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে সবচেয়ে ভালো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়। তাছাড়াও প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানান আপনার জীবনের সব কিছুর জন্য। এর জন্যও ধন্যবাদ জানান, অনেকের চেয়ে আপনি অনেক ভালো আছেন। আপনার চেয়েও বহু মানুষ অনেক কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে, কিন্তু তারা কখনো হার মানেনি। এটাও আপনার জীবনের অনেক বড় শিক্ষা হতে পারে। জীবন কঠিন হতে পারে, কিন্তু হার মানা যাবে না। লড়াই করে যেতে হবে শেষ পর্যন্ত। আর এই শক্তিটাও পাওয়া যাবে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। তাই শত ব্যস্ততায়ও প্রার্থনা করুন।