নিউজ ডেস্ক:
আসন্ন ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না বিএনপি। ছয় সিটিতে জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
বিএনপি মনে করে, সিটি নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের প্রভাব পড়বে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে। তাই ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার আনতে খোদ দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া নিজেই মাঠে নামবেন। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বস্তরের মানুষের ভোট চাইবেন। চাঙ্গা করবেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। পর্যায়ক্রমে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেবেন। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। অতীতে সব সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে। আসন্ন ছয় সিটি নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে। তবে নিকট অতীতে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই সরকার ভোট ডাকাতি করেছে। নির্বাচন কমিশনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি। নতুন ইসিও যদি একই পথে হাঁটে তবে ওই নির্বাচনে থাকা না থাকা সমান কথা। ’জানা যায়, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, গাজীপুর, রাজশাহী ও রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের মধ্যে চারটিতে বিএনপির আগের প্রার্থীই থাকতে পারে। বদল হতে পারে দুটিতে। এক্ষেত্রে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান, রাজশাহীর মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সিলেট সিটি করপোরেশনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, খুলনার মেয়র মো. মনিরুজ্জামান মনিই আগামীতেও ধানের শীষের প্রার্থী হবেন। বরিশালের বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালের পরিবর্তে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের নামই দলের ভিতরে-বাইরে আলোচনায় আছে। তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের কথাও বলছেন কেউ কেউ।
রংপুর সিটি নির্বাচনে বিগত সময়ে প্রার্থী হয়েছিলেন মহানগর সহসভাপতি কাউসার জামান বাবলা। এবারও তিনি আলোচনায়। তবে এবার প্রার্থী বদলের আভাস পাওয়া গেছে। রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেনও দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। অন্যদিকে রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদও পছন্দ নেতা-কর্মীদের একটি অংশের। বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, নির্বাচন মোটামুটিভাবে ৫০ ভাগ সুষ্ঠু হলেও মেয়র পদে বিএনপির সব প্রার্থীই বিজয়ী হবে। তবে ভোট ডাকাতির শঙ্কাও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। নিকট অতীতে স্থানীয় সরকারের যতগুলো ভোট হয়েছে, সবগুলোতেই কারচুপি হয়েছে বলে মনে করেন তারা। তাই সিটি নির্বাচনে অনুকূল পরিবেশ নিয়েও দলটির যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তবে সিটিতে সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি। যদি ইসি তাদের কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হন, সেখান থেকেই ইস্যু তৈরি করে রাজপথের আন্দোলনে নামবে বিএনপি। বিএনপির হাইকমান্ড অবশ্য সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয় দুটোতেই লাভ দেখছে। তারা মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সবগুলো সিটিতেই বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। এই বিজয়কে সামনে রেখেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশ-বিদেশে জনমত তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হলেও তা নিয়েও প্রতিবাদের ইস্যু তৈরি করা হবে। প্রভাবশালী দেশসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দলটি বলবে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হতে পারে না। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সরকার দাবি আরও জোরালো হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, আমরা মনে করি, ‘সিটি নির্বাচন নতুন ইসির জন্য একটি অ্যাসিড টেস্ট। ইসি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারে কি না, সেটা দেখতে চাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা কী হবে, তাও দেখা হবে। প্রার্থী কারা হবে, তা নিয়েও দল চিন্তাভাবনা করছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলো, সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েও বিএনপির প্রার্থীরা একদিনের জন্যও শান্তিতে থাকতে পারেনি। জনপ্রিয় প্রতিনিধিদের নামে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে বরখাস্ত করে জেলে পাঠিয়েছে এই সরকার। গণতন্ত্রের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ এ সরকারের নেই। ’ ২০১৩ সালের ১৫ জুন একসঙ্গে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে সবগুলোয় বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। একই বছরের ৬ জুলাই গাজীপুর সিটির নির্বাচনে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। এর আগে রংপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির পরাজয় হয়। এরপর দুই ভাগে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ভোটের দিন সকাল ১০টায় বর্জন করে বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে হারলেও জিতে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে। এবার রংপুর সিটি নির্বাচনেও জয়ের প্রত্যাশা করছে দলটি। তাই প্রার্থীর ক্ষেত্রেও আসছে চমক। ছয় সিটিতেই বিএনপির ভাবনায় শুধুই জয়।