নিউজ ডেস্ক:
গত কয়েক বছর ধরে ধানের জমিতে আমবাগান করা হচ্ছে। এ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। আম থেকে হয়তো লাভটা বেশি মিলছে। কিন্তু এর বিরূপ প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
দেশে ফসলি জমিতেই গড়ে উঠছে আমবাগান। শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ৫ জেলায় গত ৫ বছরে ২০ হাজার ৪১৭ হেক্টর (১ হেক্টর সমান ২.৪৭১ একর) জমিতে নতুন আমবাগান গড়ে উঠেছে। ১১ শতাংশ ধানের জমি কমেছে। তুলনামূলক বেশি লাভের কারণে আম চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর ফলে ভবিষ্যতে দেশে খাদ্য সংকটের আশংকা রয়েছে। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পরিকল্পিতভাবে আম চাষের সুপারিশ করেছেন তারা।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে। আর এ অবস্থার উত্তরণেও তারা কাজ করছে। জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ধানের জমিতে আমবাগান করা হচ্ছে। এ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। আম থেকে হয়তো লাভটা হাতে হাতে মিলছে। কিন্তু এর বিরূপ প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। জমি কমে গেলে ধান উৎপাদন কমে যাবে। কাজেই প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে একসময় এর ঘাটতি দেখা দেবে। এ জন্য এখনই সতর্ক হতে হবে।
কৃষি অধিদফতর সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি আমবাগান বেড়েছে রাজশাহীতে। আলোচ্য সময়ে এ জেলায় ৭ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান বেড়েছে। এরপর নওগাঁয় ৪ হাজার ৮৬৯, নাটোরে ২ হাজার ৪৭৩ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান বেড়েছে। এ ছাড়া সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলায় ৩ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে আম চাষ বেড়েছে। গবেষকরা বলছেন, এভাবে ধানের জমি কমে গেলে আগামীতে এ অঞ্চল খাদ্য ঘাটতির দিকে চলে যেতে পারে। কৃষি অধিদফতরের তথ্যমতে, গেল পাঁচ বছরে এ অঞ্চলে ১১ শতাংশ বোরো ধানের আবাদ কমেছে।
তবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমের উৎপাদন কিছুটা কমে যায়। সে বছর ৫৪ হাজার ৭২২ হেক্টরে উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৩৬ টন। কিন্তু পরের বছর তা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৮ টনে। গত বছর আমবাগান ছিল ৫৮ হাজার ৯২৪ হেক্টর জমিতে। গত বছর রাজশাহী থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কেজি আম রফতানি হয় ইউরোপে।
তবে এ নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয় জানিয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মঞ্জুরুল হক বলেন, সেচ সংকটসহ নানা কারণে ধান উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এ কারণে বিকল্প ফসলের দিকে যাচ্ছেন চাষীরা। তবে খরা সহিষ্ণু ধান উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। তাছাড়া আমরা চাষীদের রবিশস্য চাষে বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে অধিক লাভজনক হওয়ায় আম চাষে ঝুঁকে পড়ছেন চাষীরা। রুক্ষ বরেন্দ্র অঞ্চলে কখনোই সুমিষ্ট আম উৎপাদিত হবে না, বছর দশেক আগেও এমন ধারণাই ছিল এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে। অথচ সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে গত দশ বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলে ঘটেছে আম চাষে নীরব বিপ্লব।
সদর উপজেলার আমনুরার সাইদুর রহমান জানান, তিনি তার ৩ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের আমের গাছ লাগিয়েছেন। আগে ধান চাষ করা হতো এই জমিতে। কিন্তু ধানে লাভ তেমন না হওয়ায় তিনি গত এক বছর আগে আমের গাছ লাগিয়েছেন।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলায় এবার আরও বেশি জমি আম চাষের আওতায় আনা হয়েছে। গত মৌসুমে জেলায় ৩ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হলেও এবার চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৯৫০ হেক্টরে। অতিরিক্ত ৪০ হেক্টরে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ ছাড়াও গৃহস্থরা তাদের পারিবারিক কৃষিজমিতেও বেশি করে আম চাষে উদ্যোগী হয়েছেন। আম রফতানির ব্যাপারে তারা এরই মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হতে শুরু করেছেন।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আবদুল মান্নান জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৯৫ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৮০৫ হেক্টর, তালায় ৭০৫ হেক্টর এবং কলারোয়ায় ৬০২ হেক্টর জমি এবার আম চাষের আওতায় আনা হয়েছে।