ধর্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

0
8
ধর্ম মানবজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ধর্ম মানুষকে ন্যায়পরায়ণ, উদার ও সংযমী হতে শিক্ষা দেয় এবং জীবনের সফলতা ও কল্যাণ অর্জন করে নিজের চারিত্রিক পূর্ণতা লাভে উদ্বুদ্ধ করে। ধর্ম ছাড়া শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন সম্ভব নয়। তাই সম্প্রীতিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মের আশ্রয় নেওয়া অপরিহার্য। মানবজীবনে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা নিম্নে উপস্থাপিত হলো :

এক : নৈতিক ভিত্তি 

নৈতিকতার অর্থ হলো আদর্শ, চরিত্র, রীতিনীতি, শিষ্টাচার, সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের মৌলিক উপকরণ। মানবজীবনের ক্রিয়াকর্ম ও মঙ্গলের অনুশাসনে যেসব নিয়ম জড়িত সেগুলো আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে সুসংহত পদ্ধতির অনুসন্ধান হচ্ছে নৈতিকতা। (A Johnson, Ethics : Selections from classical and contemporary writers (US : Cengage Learning, 2011), p. 1)

কেবল ধর্মের মাধ্যমে মানুষের এ কাঙ্ক্ষিত নৈতিকতা অর্জন কর সম্ভব। আদর্শ সমাজ গঠন ও সচ্চরিত্র ন্যায়বাদী মানুষ তৈরি সর্বোপরি নৈতিকতাসম্পন্ন মানবসম্পদ সৃষ্টিতে ধর্মের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ধর্ম মানুষকে এমন সৎ গুণাবলির অধিকারী বানিয়ে দেয় যা তাকে যাবতীয় অনাচার, অপকর্ম ও মনুষ্যত্ব বিবর্জিত কর্ম থেকে দূরে রাখে। এছাড়া ধর্ম একজন মানুষকে সমাজে আদর্শবান মানুষের কারণে সমাজ হয় নির্মল ও সুনিয়ন্ত্রিত। (ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন, আত-তিবইয়ান ফি মুকারানাতিল আদইয়ান, পৃ. ৪৫)

দুই : সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা 

ধর্ম মানুষের জীবনে শান্তি, সৌহার্দয-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা ও মানবিক অধিকার সংরক্ষণে সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি ধর্ম মানুষকে মানবপ্রেমের শিক্ষা দেয়। যেমন, অন্যকে সহযোগিতা করা, অন্যের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন, সুশৃঙ্খল ও সমাজের কল্যাণকামী হওয়া ইত্যাদি প্রত্যেকটি বিষয় সমাজকে সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতির আবহে পরিপূর্ণ করে তোলে। এজন্যই আল-কোরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে : ‘….সৎ কর্ম ও খোদাভীতির ভিত্তিতে একে অন্যকে সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যকে সহায়তা করোনা। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কঠোর শাসি্তদাতা।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ২)

তিন : সম্পদ ও সম্মানের নিরাপত্তা 

ধর্ম মানুষকে জীবন সম্পদ ও সম্মান রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। পৃথিবীর সব ধর্মই পরধন আত্মসাৎ, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, লুণ্ঠন, অবৈধ উপার্জন ও অযৌক্তিক ভোগ বিলাসকে চরম ঘৃণ্য বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এছাড়া ধর্ম একান্তভাবে মানুষকে মন্দ ও ঘৃণ্য পথ থেকে বিরত থাকার নিমিত্তে সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করেছে। যাতে মানুষ কস্মিনকালেও এসব দুষ্কর্মের দিকে পা না বাড়ায়। অনুরূপভাবে ধর্ম সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের সম্মান রক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কেউ যেন অন্যের সম্মান ক্ষুণ্ন না করে সে বিষয়ে ধর্মে আছে কঠোর নির্দেশনা। ধর্ম মানুষের সম্মানে আঘাত করা, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা ইত্যাদি গর্হিত কাজ-কর্মকে জোরালোভাবে নিষিদ্ধ এবং শাস্যোগ্য অপরাধ ঘোষণা করেছে। (আহমিয়াতুদ তাদাইউন ফি হায়াতিল ইনসান, পৃ. ৮৫-৮৬)

চার : ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে শৃঙ্খলাবোধ সৃষ্টি 

ধর্ম মানুষকে ব্যক্তিগত জীবনে সৎ ও নিষ্ঠাবান হতে নির্দেশ দেয়। ব্যক্তির মানবিক গুণের লালন ও বিকাশে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। শুধু মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেই নয় তার পারিবারিক জীবনে সদ্ভাব ও সম্প্রীতি বজায় এবং পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ়ীকরণ ধর্ম অবিস্মরণীয় ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ধর্ম পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে অপরের ব্যাপারে দায়িত্ববান হওয়ার ঘোষণা দেয়। এ দায়িত্ব পালনে কেউ অবহেলা করলে আখিরাতে তার মন্দ পরিণতি বরণ করার হুঁশিয়ারি দেয়। (আদ-দ্বিন বাইনাল ফারদ ওয়াল মুজতামা, পৃ. ৮৫)

পাঁচ : রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে নিরাপত্তা বিধান

রাজনীতি ও অর্থনীতি মানবজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এ ক্ষেত্রে মানুষের পদচারণা কেমন হবে ধর্ম সে বিষয়েও নির্দেশনা দেয়। মানুষের রাজনীতিতে যেন কলুষ-কালিমা না থাকে, রাজনীতিবিদরা যেন বৈষয়িক স্বার্থে মানুষের অকল্যাণ ও সর্বনাশ না ডেকে আনে সে বিষয়ে ধর্ম সজাগ ভূমিকা পালন করে। অনুরূপভাবে ধর্ম অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে নৈতিকতার সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ মাধ্যমে উপার্জন, বণ্টন, ভোগ ও ব্যবহারের বৈধতা ও অবৈধতার সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করে দিয়েছে যা মানুষকে অপচয়, অপব্যয়, অর্থহীন ভোগ-বিলাস থেকে মুক্তি দিয়ে শান্তিপূর্ণ অর্থনৈতিক জীবন নির্বাহের এক ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলিত করে। (ড. মো. ইবরাহিম খলিল, বিশ্বের প্রধান ধর্ম। (ঢাকা : মেরিট ফেয়ার প্রকাশন, ২০১১ খ্রি.), পৃ. ২৫-২৬)