হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটুক্তি, ইসলাম ধর্ম ও মেয়েদের পর্দা করা নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় আকাশ চন্দ্র সিংহ (২৬) নামের এক যুবককে গতকাল সোমবার (১৮নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তাঁর নিজ বসতঘরের ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয় ৩০ থেকে ৩৫ জন ইসলাম ধর্মের ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীরা।
খবর পেয়ে ওইদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ধর্মপাশা থানার একদল পুলিশ সেখানে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় উপজেলার খয়েরদিরচর গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম (২৫) বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই ধর্মপাশা থানায় একটি মামলা করেছেন। আকাশ চন্দ্র সিংহ উপজেলা পরিষদের পার্শ্ববর্তী থানা উন্নয়ন কেন্দ্রের তপন চন্দ্র সিংহের ছেলে।
ধর্মপাশা থানা পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের থানা উন্নয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দা আকাশ চন্দ্র সিংহ (২৬), একই ইউনিয়নের দুধবহর গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন (৩২) ও সেলবরষ ইউনিয়নের খয়েরদিরচর গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম (২৫) তিনজনই পূর্ব পরিচিত। খায়রুল ইসলাম ও আকাশ চন্দ্র সিংহ উপজেলা সদরের ক্রিয়েটিভ সলিউশন কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন। গত ২৮ অক্টোবর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার সদর বাজার থেকে তাঁরা তিনজন উপজেলার বাদশাগঞ্জ বাজারে মোটর সাইকেলযোগে ঘুরতে যান।
সেখান থেকে ফেরার পথে উপজেলার আহম্মদপুর বাজারে আসা মাত্রই আকাশ চন্দ্র সিংহ বলেন যে, তোমাদের নবী ছয়বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। তোমাদের ধর্মটা হচ্ছে একটা ভুয়া ধর্ম যা একটা মতের ওপর ভিত্তি করে চলে। প্রেমবিহীন তারা বোরকা বা পর্দা করেনা। যতগুলো মেয়ে পর্দা করে প্রতিটা মেয়েই চরিত্রহীন। তখন মোটরসাইকেলটি থামানো হয়। এ নিয়ে খায়রুল ইসলাম ও আল আমিন প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে আকাশ কুমার সিংহের সঙ্গে তাঁদের দুইজনের কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে আকাশ চন্দ্র সিংহ তাঁর কথাগুলো প্রমাণ করার জন্য চ্যালেঞ্জ করে কিছুদিনের সময় চেয়ে নেয়। সোমবার (১৮নভেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে খায়রুল, আল আমিনসহ ৪ থেকে ৫ জন আকাশদের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটুক্তি ও ইসলাম ধর্ম এবং মেয়েদের পর্দা করা নিয়ে বাজে মন্তব্য করার কথা স্বীকার করেন।
আকাশ চন্দ্র সিংহ বলেন, আমি গণিত বিষয়ে নেত্রকোনা সরকারি কলেজে মাস্টার্সে অধ্যয়ণরত। আমি হিন্দু হলেও সব ধর্মের প্রতি আমার সম্মান রয়েছে। ইসলাম ধর্ম, মেয়েদের পর্দা ও হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কোনোররকম কটুক্তি ও বিরুপ মন্তব্য আমি করিনি। আমি ও খায়রুল ইসলাম ক্রিয়েটিভ সলিউশন কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করি। আমি গণিত পড়াই। সেও গণিত পড়াবে। এ নিয়ে তার সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। এখন পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এই ঘটনা সাজানো হয়েছে। ধর্মপাশা থানার এসআই হাফিজুল ইসলাম বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটুক্তি ও ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগে সোমবার (১৮নভেম্বর) রাতে থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এই মামলায় আকাশ চন্দ্র সিংহ কে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯নভেম্বর) দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।