নিউজ ডেস্ক:
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের কৃষি উত্পাদনে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ও উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ধান উত্পদান ১৭ ভাগ এবং গম উত্পাদন ৬১ ভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু তুলনামূলক খাদ্য উত্পাদনে বাংলাদশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার এডিবির প্রধান কার্যালয় ম্যানিলা থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ঝুঁকি বিষয়ে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে কৃষি, স্বাস্থ্য, নগর উন্নয়ন, আঞ্চলিক বাণিজ্য ছাড়াও বিভিন্ন খাতে অর্থনৈতিক ক্ষয়-ক্ষতির তুলনামূলক হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।
এডিবি এবং পটসডাম ইন্সটিটিউটি ফর ক্লাইমেট ইমপ্যক্ট রিসার্চ (পিআইকে) যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হলে যে হারে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে তাতে ২০৮০ সালের মধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ৬৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের চাষ যোগ্য জমির পরিমাণ ৪০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উষ্ণতা এবং সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে শুধু নিম্নাঞ্চলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, এর ফলে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নও থমকে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ ভূটানে ধান উত্পাদন সাড়ে ১২ শতাংশ, ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলে সাড়ে ১৪ শতাংশ, শ্রীলংকায় উপকূলীয় অঞ্চলে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই শতাব্দী শেষে বৈশ্বিক উষ্ণতা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নতুন প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে এশিয়ার মধ্যে তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে এই অঞ্চলের আবহাওয়ায় ব্যপক পরিবর্তন আসবে। কৃষি, মাত্স খাত, ভূমি এবং সমুদ্র জীব বৈচিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এর সাথে আঞ্চলিক বাণিজ্য, নগর উন্নয়ন, মাইগ্রেশন এবং স্বাস্থ্য খাতেও বিরূপ প্রভাব পড়বে। এশিয়ার এই অঞ্চলের পরিবর্তন এতই ভয়াবহ হতে পারে যার ফলে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
এ বিষয়ে পিআইকে এর পরিচালক অধ্যাপক জোয়াকিম চিলেনহুবার বলেছেন, এশিয়ার দেশগুলোর হাতেই রয়েছে বিশ্বের ভবিষ্যত্। দেশগুলো যদি জলবায়ু পরিবর্তনের এই ঝুঁকি মেকাবেলায় এগিয়ে আসে তাহলে সেটি সমগ্র বিশ্বকেই রক্ষা করবে। সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এখন দ্বিগুণ। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সমুদ্র প্রিষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে বন্যা ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ২০৫০ সাল নাগাদ এশীয় অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতির পরিমান ৫২ বিলিয়ন ডলারে পৌছে যাবে। যা ২০০৫ সালেও ছিলো মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার।