অভিনব এক ডিভাইস যুক্ত স্মার্টজুতার আবিষ্কার করেছে নারীদের হয়রানি ও ধর্ষণ প্রতিরোধে

0
14

আবদুল্লাহ আল সাইম। বাবা মো. হাবিবুল্লাহ কালাম। বরগুনার এভারগ্রিন হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র সাইম। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি  ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নতুন ডিভাইস তৈরির প্রতি ঝোঁক ছিল তার। তার তৈরি বিভিন্ন ডিভাইস পুরষ্কারও জিতেছে অনেকবার। এবার সাইমের নতুন উদ্ভাবন, নারীদের নিরাপত্তায় স্মার্ট জুতা।

সাইমের স্মার্ট জুতা চলার পথে নারীদের হয়রানি ও ধর্ষণ প্রতিরোধে কাজ করবে। তার উদ্ভাবনকৃত এই জুতা পায়ে থাকলে কোনো নারী যদি ধর্ষণচেষ্টা বা আক্রমণের শিকার হন, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবারের কাছে পৌঁছে যাবে বার্তা। শুধু তাই নয়, জুতায় রয়েছে লোকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেম। যার সাহায্যে খুব সহজেই পুলিশের সহযোগিতা পেতে এবং ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারবে স্বজনরা। ডিভাইসটিতে আরও যুক্ত করা হয়েছে ২৫০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক, যার মাধ্যমে একজন আক্রমণকারীকে খুব সহজেই পরাস্ত করতে পারবেন যে কোনো ভুক্তভোগী নারী।

আবদুল্লাহ আল সাইমের সবশেষ উদ্ভাবন স্মার্ট জুতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে সমস্ত ইলেকট্রনিক সামগ্রী পাওয়া যায় তার মাধ্যমেই জুতাটি তৈরি করেছি। এর মধ্যে একটি জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহার করেছি, যার মাধ্যমে ফোন কল, এসমএস ও লাইভ লোকেশন পাওয়া যাবে। কেউ আক্রমণ করলে প্রতিরোধ করতে অটো চার্জিং সিস্টেম ব্যাটারির সংযোগে ইলেকট্রনিক শক সিস্টেম সেট করা রয়েছে। এ স্মার্ট জুতাটি প্রাথমিকভাবে তৈরি করতে আমার প্রায় দুইমাস সময় লেগেছে। তবে এখনো কাজ চলমান রয়েছে, সব কাজ শেষ হলে এর মধ্যে যুক্ত করা সব কিছুই পুরোপুরি কাজ করবে।

তিনি বলেন, জুতাটির মধ্যে একটি পুশ বাটান সেট করা থাকবে, যেখানে অনিচ্ছাকৃত কোনো চাপ পড়বে না। যখন কেউ বিপদে পড়বে তখন ওই পুশ বাটনে চাপ দেবেন। এতে প্রথম চাপে অপরপ্রান্তে আগে থেকেই সেট করা নাম্বারে এসএমএস এবং পরে আরকটি চাপে সরাসরি কল চলে যাবে। ফলে ঘটনাস্থলে কি হচ্ছে সবকিছুই শুনতে পাবেন অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি। ট্রাকিং সিস্টেম চালু থাকায় গুগল ম্যাপের মাধ্যমে দ্রুত ভুক্তভোগীর কাছে পৌঁছানো যাবে। এছাড়া তৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে জুতাটিতে যুক্ত থাকবে ২৫০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক সিস্টেম।

সাইমের সহপাঠী মো. তাওহিদ বলেন, সম্প্রতি ধর্ষণ প্রতিরোধে সাইম যে জুতা উদ্ভাবন করেছে তা দিয়ে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এছাড়া সাইম আরও অনেক কিছুই উদ্ভাবন করেছে। বর্তমানে সাইমের একের পর এক উদ্ভাবন আমাদের জন্য এক প্রকার প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। সরকারিভাবে যদি তাকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো কিছু করতে পারবে।ভবিষ্যতে সাইমকে একজন বড় বিজ্ঞানী হিসেবে দেখবেন বলে আশা করেন তার মা শাহনাজ আরা শারমিন। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই ওকে যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি। তবে এসব কাজ অনেক ব্যয়বহুল। সরকার যদি ওর কাজে একটু সহযোগিতা করে তাহলে হয়তো একদিন সাইম দেশের জন্য আরও বড় কিছু করতে পারবে।

সাইমের বাবা মো. হাবিবুল্লাহ কালাম বলেন, আমাদের আশা ছেলে বড় হয়ে একজন বিজ্ঞানী হবে। দেশের জন্য কিছু করবে। তবে এ কাজে সফল হতে তার পেছনে অনেক অর্থের প্রয়োজন। আমি একজন সামন্য প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক অতিরিক্ত অর্থ খরচের সামর্থ্য আমার নেই। সরকার যদি আমার ছেলের পাশে এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো আমাদের মনের আশা পূরণ হবে।

এভারগ্রিন পাবলিক মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল জব্বার আকান বলেন, আমাদের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইম অনেক কিছু উদ্ভাবন করেছে। বিগত সময়ে সে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়া বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়ে জেলায় প্রথম হয়েছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় উদ্ভাবনে তার উৎসাহ উদ্দীপনা অনেক বেশি এবং মেধাও রয়েছে। আমরা তাকে জাতীয় পর্যায়ের তার উদ্ভাবন নিয়ে অংশগ্রহণ করতে সহযোগিতা করছি। তার এমন কাজে স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এমন সব গবেষণা ও উদ্ভাবনে যদি সাইম সরকারিভাবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সহায়তা পায় তাহলে আশাকরি তার প্রতিভার আরও বিকাশ ঘটবে।