নিউজ ডেস্ক:
চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ায় অভিযানকালে টিএসআই ওহিদকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বত্তরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়া-হকপাড়ায় নারী ঘটিত বিবাদের জের ধরে দফায় দফায় দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সময় পুলিশের টহল পার্টির উপর হামলা চালিয়ে সদর ফাঁড়ির টিএসআই ওহিদুল ইসলাম ওহিদকে মারাত্মক জখম করেছে মিন্টু (৩২) নামের এক দেশীয় অস্ত্রধারী যুবক। দেশীয় অস্ত্রসহ এ সময় তাকে আটক করে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। সে ওই এলাকার বুদো’র ছেলে এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনে ৬টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল সোমবার রাতে ফার্মপাড়ার কদমতলায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং হামলার সাথে জড়িত সকলকে আটক করতে অভিযান অব্যহত রয়েছে। এদিকে আক্রমণের শিকার ওহিদকে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকের পরামর্শে রাতেই উন্নত চিকিৎসার্থে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আক্রমণকারী অস্ত্রধারী যুবককে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগে ভর্তি করলে সেখানে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (হেড কোয়াটার্স) আহসান হাবীব, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোজাম্মেল হক, জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এরপর দফায় দফায় অভিযান চালালেও হামলার সাথে জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
হামলার শিকার টিএসআই ওহিদুল ইসলাম সময়ের সমীকরণকে বলেন, ‘আক্রমণকারী মিন্টু আমাকে আগে থেকে চিনত। কিন্তু দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে আমি সেখানে পৌছুলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার উপর ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে সে।’
চিকিৎসাধীন টিএসআই ওহিদকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেখতে এসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় চুয়াডাঙ্গা শহরের ফার্মপাড়া এলাকায় ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের আক্রমণে টিএসআই ওহিদের গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে ওই এলাকায় পুলিশি টহল ও অভিযান জোরদার করা হয়েছে। মূল আক্রমণকারী মিন্টু আটক হয়েছে; পরিকল্পনাকারীদেরকেও আটক করতে পুলিশি অভিযান চলছে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোজাম্মেল হক জানান, ‘মিন্টুর নামে বিভিন্ন সময়ে চুয়াডাঙ্গা সদর ৬টি মামলা রয়েছে। তাকে আটক করা হয়েছে; একই সাথে তার নামে পুলিশের উপর হামলা ও মারাত্মক জখম করার অপরাধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। শিঘ্রই হামলার সাথে জড়িত সকলকে আটক করে আইনের আওতায় নেয়া হবে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাহাত ইমাম জানান, আহত দুই জনের মধ্যে টিএসআই ওহিদুল ইসলামের ডান ঘাড়ে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং আক্রমণকারী মিন্টুর মাথার পিছনের দিকে আঘাতের কারণে শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এক মেয়ের সাথে স্থানীয় যুবক শামীমের প্রেমজ সম্পর্ক নিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকালে ফার্মপাড়ার রাজার ছেলে শামিমকে হকপাড়ার কাওছার, জনি, রাশেদরা মারধর করে। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ নিয়ে আবারো গত শনিবার রাতে হকপাড়ার সাদেক আলীর ছেলে ট্রাক হেলপার শরিফ (২০) ও একই এলাকার শওকতের ছেলে সুমনকে কুপিয়ে জখম করে। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ নিয়ে গত রোববার সকালে দফায় দফায় আবারো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সকাল ৯ টার দিকে হকপাড়ার মোবারক হোসেনের ছেলে মাছব্যবসায়ী কালামকে কুপিয়ে জখম করে। এর দু’ঘন্টা ব্যবধানে হকপাড়ার জামালের ছেলে জসিমকে কুপিয়ে জখম করে তারা। তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় এলাকায় থমথমে আতঙ্ক বিরাজ করে। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়। একই কারণে ওই এলাকায় পুলিশি বিশেষ নজরদারি অব্যাহত ছিল। যে কারণে গতকাল সন্ধ্যায় বিবাদমান দু’টি গ্রুপ আবার সংগঠিত হলে দ্রুতই সে সংবাদ পৌছে যায় পুলিশের কাছে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর ফাঁড়ির টিএসআই ওহিদের নেতৃত্বে তিনটি মোটরসাইকেলে ৬জন ফোর্স সেখানে পৌছালে ওৎ পেতে থাকা মিন্টুসহ তার সঙ্গীরা আকস্মিক হামলা চালায়। এ সময় মিন্টু তার হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র (বড় হাসুয়া) দিয়ে আঘাত করে টিএসআই ওহিদকে মারাত্মক জখম করে পালানোর চেষ্টাকালে স্থানীয় জনতার হাতে আটক হয়।
dailysomoyersomikoron