নিউজ ডেস্ক:
প্রস্তাবিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন প্রত্যাহারের কারণে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করে না ব্যবসায়ীরা। তারা মন্তব্য করেছে, রাজস্ব আহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি কমানো গেলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণে ঘাটতি হবে না।
গতকাল শনিবার দুপুরে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের বাজেটোত্তর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ বিসিআই, সিসিসিআই, এমসিসিআই, বিটিএমএ, বিপিজিএমইএর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ভ্যাট আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত, আবগারি শুল্কহার কমানোসহ এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাব গুরুত্বসহ বিবেচনা করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান ব্যবসায়ী নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট ও ট্যাক্স আহরণে আইন প্রয়োগের বিরুদ্ধে নয় ব্যবসায়ীরা। তবে এক্ষেত্রে হয়রানি চায় না তারা। আর রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে যেসব দুর্নীতি রয়েছে তা বন্ধ হলে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো বাধা হবে না।
তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাজেটে রাজস্ব আহরণে যে ঘাটতি হবে তা পূরণে দুর্নীতি কমাতে হবে। এ ছাড়া এনবিআরের কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে তাদের গবেষণা ও প্রশিক্ষণের যে অভাব রয়েছে তা দূর করতে হবে।
শফিউল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগের প্রধান শর্ত আস্থা। নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীরা শঙ্কায় ছিলেন। আইনটি দুই বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় করতে হবে আইনসম্মতভাবে, এক্ষেত্রে আইনের অপপ্রয়োগ যেন না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রেখে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি প্রতি মাসে কেস টু কেস ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করবে। এর ফলে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে, তেমনি ব্যবসায়ীরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের মধ্যে দিয়ে সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্যাটমুক্ত থাকার জন্য কুটির শিল্পের আওতায় ব্যবসা পরিচালনার পরামর্শ দেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
রেয়াতি সুবিধা না থাকার কারণে ক্ষুদ্র কারখানার মালিক, শ্রমিক ও গরিব ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে স্থায়ীভাবে প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল ও প্লাস্টিকের পাদুকা এবং হাতে তৈরি পাওরুটি ও বিস্কুটের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন তিনি।
এ খাতের ব্যবসায়ীরা বিদ্যমান কুটির শিল্পের সুবিধার আওতায় তালিকাভুক্ত হয়ে ভ্যাটের আওতামুক্ত থাকার সুযোগ গ্রহণ করুন। এতে ক্ষুদ্র শিল্পের সমস্যা সমাধান হবে বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে এনবিআরের সঙ্গে কোনো সমস্যা হলে তা সমাধানে এফবিসিসিআই সব ধরনের সহায়তা করবে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তৈরি পোশাক, চামড়া, হিমায়িত খাদ্যসহ সব রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের হার এক শতাংশ থেকে হ্রাস করে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। তা নির্ধারণ করার জন্য আবারও অনুরোধ জানাচ্ছি।
উৎসে কর কমনোর দাবি জানিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, লাভের ওপর উৎসে কর নেওয়া হলে এর হার আরো বাড়িয়ে দিলেও ব্যবসায়ীদের সমস্যা হবে না। কিন্তু লাভ হোক আর লস হোক, এফওবির ওপর বাধ্যতামূলক কর আরোপ অসহনীয়। তা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনলে ব্যবসায়ীদের জন্য কল্যাণ হবে। আশা করি সরকার তা বিবেচনা করবে।