নিউজ ডেস্ক:
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দুই দিনের সফরে আজ রবিবার দুপুরে ঢাকা পৌঁছেছেন। দুপুর দেড়টার দিকে তাকে বহনকারী বিশেষ প্লেনটি রাজধানীর কুর্মিটোলা বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে।
এসময় তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রতিবেশী দুই দেশের নিয়মিত আলোচনার প্লাটফর্ম জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন বা যৌথ পরামর্শক সভার চতুর্থ বৈঠক উপলক্ষে তার এ সফর। আগামীকাল দুপুরে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে সুষমা স্বরাজের। সফরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের এই হাইপ্রোফাইল রাজনীতিক।
ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলির সফরের পর এক মাসের মধ্যেই দ্বিতীয়বারের মতো শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় নেতৃত্ব ঢাকা সফরে আসছেন। সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশে ভারতীয় অর্থায়নের ১৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন বলে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের চতুর্থ যৌথ পরামর্শক কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবেন সুষমা স্বরাজ।
এরপর তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। আগামীকাল সকালে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন সুষমা স্বরাজ। পরে দুপুরেই তিনি বিশেষ বিমানে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
কাগজেকলমে দুই দিনের সফর হলেও ২৪ ঘণ্টার কিছু কম সময় ঢাকায় অবস্থান করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরামর্শক কমিশনের এ বৈঠকে ২০১৫ সালের জুনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর এবং ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরের চুক্তি, সমঝোতা এবং সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবে দুই দেশ।
প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ নয়াদিল্লি সফরে দুই দেশের মধ্যে ৩৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পাশাপাশি নতুন পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত। সে অনুসারে ভারতের অর্থমন্ত্রী ঢাকা সফরে এসে এ বিষয়ে চুক্তি করেন। এর অধীনে নেওয়া নতুন প্রকল্প এবং আগের ঋণের সমাপ্ত বা বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে এবারের যৌথ পরামর্শক বৈঠকে।
পাশাপাশি বৈঠকের আলোচনায় আসবে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যুই। এজেন্ডায় থাকবে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ইস্যুও। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুতেও ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে বাংলাদেশ। সুষমা স্বরাজের এ সফরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান থাকবে এজেন্ডায়। এ ছাড়া এ সফরে দ্বিপক্ষীয় জ্বালানি, বাণিজ্য, উপ-আঞ্চলিক সংযুক্তিসহ আরও বিষয় থাকতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরকে সামনে রেখে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতির অধীনে আঞ্চলিক ফ্রন্টলাইন অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। বিবিআইএন, বিমসটেকসহ আঞ্চলিক গ্রুপিংয়ের ক্ষেত্রে ঢাকা শুধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই রাখছে না, ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসিরও মূল পিলার বা স্তম্ভ হলো বাংলাদেশ।