পরকিয়ার প্রতিশোধ নিতে এ হত্যাকা- : পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানের ঘটনাস্থল পরিদর্শন
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: দীর্ঘ আড়াই বছর ওঁৎ পেতে থেকে আজিজুল ইসলাম পেঙ্গা তার স্ত্রীর সাথে পরকিয়ার প্রতিশোধ নিতে উপর্জপূরি বোমা হামলা করে হত্যা করলো বন্ধু কালুকে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী পীরপুরকুল্লা গ্রামে। নিহত কালু পীরপুরকুল্লা গ্রামের কিতাব আলীর ছেলে। এ ঘটনায় পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হামলাকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী পীরপুরকুল্লা গ্রামের চোরাকারবারী ও গরু ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম পেঙ্গা (৪৫) ও সাগরেত কালুর (৩৫) সাথে তার ছিলো দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। সে অনুসারে দু’জনই ভারত থেকে চোরাকারবারী করে আসছিলো। এরই সূত্র ধরে পেঙ্গার স্ত্রী’র সাথে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পেঙ্গার বন্ধু নিহত কালুর। নিজ স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশোধ নিতেই কালুর উপর এ বোমা হামলা। বোমা হামলার পরই ভেগে যাওয়া স্ত্রী খাদিজাকে নিয়ে পালিয়েছে আজিজুল ইসলাম পেঙ্গা।
জানা যায়, গতকাল মাঠের কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন কালু। এসময় গ্রামের পীরপুরকুল্লা গ্রামের বটতলা শয়তান মোড় নামক স্থানে পৌঁছালে একদল ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নারী ঘটিত বিষয়কে কেন্দ্রকরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে। আগামীকাল সকালে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
পূর্বের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে গ্রামবাসীরা আরো জানান, নিহত কালুর সাথে একই এলাকার মৃত খাদেমের ছেলে আজিজুল ইসলাম পেঙ্গা’র গভীর বন্ধুত্ব ছিলো। গরুর ব্যবসাসহ ইন্ডিয়ান ব্লাকের ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিলো তারা দুই বন্ধু। এই বন্ধুত্বের সুবাদে একে ওপরের বাড়িতে আসা যাওয়া ছিলো স্বাভাবিক। এই যাওয়া আসার মধ্যে পেঙ্গার স্ত্রী খাদিজার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কালুর। একপর্যায়ে গত ২০১৬ সালে পেঙ্গার স্ত্রী তিন সন্তানের জননী খাদিজাকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে কালু। তখন থেকে ফাঠল ধরে দু’জনের গভীর বন্ধুত্বের। শুরু হয় দুই পরিবারের মধ্যে শত্রুতা। নিজের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মনে আঘাত পেয়ে পেঙ্গা তার সন্তানদের নিয়ে ইন্ডিয়া, চাপড়া থানা, হাটখুলা গ্রামে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়। এর মধ্যে ভেগে যাওয়া স্ত্রী খাদিজাকে ফেরত নিতে চেষ্টার কমতিও করেনি পেঙ্গা।
গ্রামবাসীরা আরো জানান, খাদিজাকে এক নজর দেখার জন্য মাঝে মাঝে ইন্ডিয়া থেকে পীরপুরকুল্লা গ্রামে কালুর বাড়ীর আসে পাশে চায়ের দোকানগুলোতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে দেখা যেতো পেঙ্গাকে।
এর মাঝে খাদিজা ও তার পরকিয়া স্বামী কালুর সংসার আসে এক সন্তান। এ সন্তান থাকা অবস্থায় আবার ছেড়ে আসা স্বামী পেঙ্গার সাথে পুরনো সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তোলে খাদিজা। এ ঘটনায় কালু ও পেঙ্গার মধ্যে বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়। এরই একপর্যায়ে গত বছর পেঙ্গাসহ তার কয়েকজন সহযোগী কালুর বাড়িতে ঢুকে কালুর উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় পেঙ্গা ও একই এলাকার ডালিম, হারুনের নাম উল্লেখসহ একজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় আভিযুক্তরা আটক হওয়ার পর সম্প্রতি জামিনে বের হয়েছে তারা।
বোমার আঘাতে নিহত কালুর লাশ যেখানে পড়ে ছিল তার পিছনের মাঠেই কালুর চাষাবাদ রয়েছে। জমি দেখে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তার উপর বোমা হামলা চালায়। বোমা বিস্ফোরনের বিকট আওয়াজ শুনেই গ্রামের লোকজন ছুটে আসে শয়তান মোড় নামক স্থানে। ঘটনাস্থলে এসে দেখে সেখানে কালুর লাশ পড়ে রয়েছে। একই সাথে কার্পাসডাঙ্গা ক্যাম্প পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে দামুড়হুদা থানায় নেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত লাশ থানাতেই রাখা হয়েছে। আগামীকাল সকালে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
এবিষয়ে পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম এর সাথে মুঠোফনে কথা হলে তিনি সময়ের সমীকরণকে বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। তিনি আরো জানান অভিযুক্তদের আটক করে আইনের আওতাই আনতে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়েছে।