শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫

দামুড়হুদার রঞ্জু হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ২

 

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বদনপুর গ্রামের মাসুদ হাসান রঞ্জু (২৬) হত্যার রহস্য দ্রুত সময়ের মধ্যে উদঘাটন করেছে পুলিশ। পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় তাকে কোদাল দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যা কাজে ব্যবহৃত কোদাল। গ্রেফতার দুজন হলেন- বদনপুর গ্রামের মৃত নুর ইসলামের ছেলে হুমায়ুন কবির (৪১) এবং একই গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী শাহানাজ সুলতানা (২৭)।

পুলিশ জানায়, রঞ্জু হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি তার পিতা বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, বিপিএম-সেবা হত্যার মূলরহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপস্) কনক কুমার দাস ও সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানার নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনার মূলরহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে মাঠে নামে।

হত্যার ঘটনায় পারিপার্শ্বিক পর্যালোচনা করে ডিবি ও দামুড়হুদা থানা পুলিশ সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে হুমায়ুন কবিরকে পুলিশ হেফাজতে নেয়।

হুমায়ুন কবিরকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে অবিবাহিত এবং কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। একই এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী শাহানাজ সুলতানার সাথে তার ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে সম্পর্ক পৌঁছায় ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে। একই এলাকার মাসুদ হাসান রঞ্জু শাহানাজের মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতো। ফলে তাদের মধ্যকার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রঞ্জু জেনে যায় এবং তাদের মোবাইল ফোনে কথা বলার বিষয়টি শাহানাজের স্বামীর পরিবারসহ স্থানীয় লোকজনকে জানায়। ঘটনা জানাজানি হওয়ায় শাহানাজ হুমায়ুনকে ফোন দিয়ে বলে যে, রঞ্জু তাদের দুজনের কথাবার্তা রেকর্ড করে রাখছে। তাকে মেরে ফেলতে হবে। শাহানাজ আরও বলে মারতে পারলে, আমার সাথে কথা বলবা, না পারলে কথা বলবা না। উক্ত কারণে সে রঞ্জুক মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।

গত রবিবার (১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকাল ৯টার দিকে রঞ্জু ও হুমায়ুন দুজনেই ভুট্টার জমিতে সেচ দিতে যায়। হুমায়ুনের জমিতে সেচ দেওয়া শেষ হলে বেলা ১২টার দিকে রঞ্জু তার জমিতে সেচ দেওয়া শুরু করে এবং ক্যানেল কেটে ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যে যেতে থাকে। রঞ্জুর পিছনে পিছনে ভুট্টা ক্ষেতের ভিতরে যেয়ে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক পিছন থেকে কোদাল দিয়ে রঞ্জুর মাথার বাম পাশে স্বজোরে আঘাত করে হুমায়ুন। এসময় রঞ্জু কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরবর্তীতে সে রঞ্জুকে দুইটি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে কোদাল ক্যানেলের মধ্যে রেখে বাড়িতে চলে আসে। গ্রেফতারকৃত আসামি হুমায়ুন কবির ঘটনা সংক্রান্তে বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি সকালে বদনপুর গ্রামের ঘোলার বাগান মাঠে ভু্ট্টার জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় রঞ্জু। সে দুপুরে বাড়িতে না আসায় তার জন্য বিকেলে মাঠে খাবার নিয়ে গিয়ে ডাকাডাকি করেন তার পিতা। কিন্তু সাড়া শব্দ না পেয়ে তিনি বাড়িতে চলে আসেন। সন্ধ্যা নামলে রঞ্জুর পিতা ও প্রতিবেশি লোকজনসহ ভুট্টা ক্ষেতের চারিদিকে তল্লাশিকালে ভুট্টা ক্ষেতে রঞ্জুর রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular