ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেন চলাচল : রেলক্রসিংগুলোতে গেট স্থাপন ও গেটম্যান নিয়োগের দাবি
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা-কলকাতা ও দর্শনা-খুলনা রেল রুটের ১৩টি রেলক্রসিংয়ের ১০টিই অবৈধ। সংশ্লিষ্টদের নজরদারি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবে অবৈধ রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা বাড়ছেই। বিগত পাঁচ বছরে এসব অবৈধ রেলক্রসিং দিয়ে লাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৩ জনের। সেই সাথে আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী শহর দর্শনার তিনটি রেল রুটের ১৩টি রেলক্রসিংয়ের ১০টিই অবৈধ। বর্তমানে খুলনা থেকে দর্শনা জংশন হয়ে ৬টি রেলরুটে নকশিকাঁথা, কপোতাক্ষ, রূপসা, চিত্রা, মহানন্দা, সাগরদাঁড়ি, সুন্দরবন, সীমান্ত এক্সপ্রেস ও রকেট মেইলসহ ৯ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। অপরদিকে, দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা ও দর্শনা-কলকাতা রুটে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানিকৃত মালামাল নিয়ে মালগাড়ি ও সপ্তাহে ৬ দিন ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস যাতায়াত করে থাকে। ফলে বর্তমানে এ রেলরুটগুলো খুবই ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ রুট। এ রুটগুলোর মধ্যে দর্শনা জংশন থেকে খুলনা রুটে দর্শনা হল্ট স্টেশনের মাত্র এক কিলোমিটার দুরুত্বের মধ্যে ৫টি রেলক্রসিং আছে তার মধ্যে হল্ট স্টেশন সংলগ্ন একটি মাত্র রেলক্রসিং ছাড়া বাকি ৩টিরই কোন অনুমোদন নেই। বর্তমানে দর্শনা হল্ট স্টেশনের পূর্ব পাশে গ্যাং কোয়ার্টার বরাবর, মা ও শিশু হাসপাতালের উত্তরে, কেরু এক নম্বর বাংলোর উত্তরে ও হঠাৎপাড়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটিসহ মোট ৪টি অনুমোদনহীন রেলক্রসিং রয়েছে।
এসব রেল ক্রসিং দিয়ে দিনরাত বিভিন্ন ধরনের শত শত যানবাহনসহ অসংখ্য মানুষজন পারাপার হয়। দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা রেলরুটে জয়রামপুর স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোন গেটম্যান না থাকায় স্টেশন সংলগ্ন রেলক্রসিংটি রাতদিন থাকে উন্মুক্ত। এছাড়া এ রুটের ডুগডুগি পশুহাট- দোস্ত গ্রামের রাস্তার রেলক্রসিংটি খোলা অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রতি সোমবার ডুগডুগি পশুহাট থেকে পশুবাহী শত শত যানবাহন ও মানুষজন এ রেলক্রসিংটি দিয়ে পারাপার হয়। এক সময় দর্শনা জংশনের উত্তরে দুধপাতিলা রেলক্রসিংটিতে গেট ও গেটম্যান ছিল।
জানা যায়, স্বাধীনতার কয়েক বছর পর লোকবল সংকটের অজুহাতে এখান থেকে গেটম্যান ও গেট সরিয়ে নেয়া হয়। আর তখন থেকেই এ ক্রসিংটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। অপর দিকে ঢাকা-দর্শনা-কলকাতা রেলরুটে সপ্তাহে ৬ দিন মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করে। এছাড়া এ রুটেই ট্রেনযোগে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানিকৃত মালবাহী ওয়াগন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। এ রুটের দর্শনা হঠাৎপাড়া রেলগেট নামক স্থানে চুয়াডাঙ্গা-কালিগঞ্জ সড়ক পথের সংযোগস্থলে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলক্রসিং রয়েছে। এ ক্রসিংটি দিয়ে চুয়াডাঙ্গা-কালিগঞ্জ রুটের সড়ক পথে রাতদিন ঢাকা, খুলনাগামী পরিবহন, শত শত বাস, মিনিবাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, সিএনজি, ইজিবাইকসহ শত শত যানবাহন ও পথচারী চলাচল করে। কয়েক বছর আগে একটি যাত্রীবাহী বাসে ক্রসিংটি পার হতে গেলে চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় বাসটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও বাসের ৩ জন যাত্রী প্রাণ হারান। তখন থেকে এ ক্রসিংটি দিয়ে শুধুমাত্র মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচলের সময় একজন রেল শ্রমিক লাইনের একপাশে দাঁড়িয়ে লাল পতাকা দেখিয়ে যানবাহনের গতি রোধ করে থাকে, বর্তমানে গেট তৈরী করা হয় এবং গেট ম্যান থাকার জন্য রুম তৈরি করলেও নেই কোন গেট ম্যান। দায়সারা গোছের কাজ করছে কোন রকম। কয়েক মাস আগেও সিগনাল নাথাকার কারনে মালবাহি দুটি ট্রেন একটি ইশ্বরদী থেকে ছেড়ে আসা অন্যটি ইশ্বরদী অভিমূখে যাওয়া দুটি ট্রেন মুখমুখি সংঘর্ষ হয়।
এছাড়া এ রেলরুটের দর্শনা পুরাতন বাজারে ১টি, বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন ১টি, চ্যাংমারী ২ নং গেট নামক স্থানে ১টি ও জয়নগর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সংলগ্ন ১টিসহ মোট ৪টি রেলক্রসিং আছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র দর্শনা পুরাতন বাজার রেল ক্রসিংয়ে গেট ও গেটম্যান আছে বাকি ৩টিই অবৈধ ও অরক্ষিত। তার মধ্যে জয়নগর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সংলগ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে কোন গেট বা গেটম্যান নেই। ২৪ ঘণ্টাই এটি থাকে উন্মুক্ত। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যাতায়াতকারী দেশি-বিদেশী পাসপোর্টধারী যাত্রীরা এই ক্রসিং দিয়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে ও পায়ে হেঁটে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রেললাইন পারাপার হয়ে থাকে। এদিকে অবৈধ দখলদাররা এ সমস্ত রেলক্রসিংয়ের বেশিরভাগেরই উভয় পাশে রেলের জায়গা দখল করে একেবারে রেললাইনে ধার ঘেঁষে দোকানপাটসহ বাড়ি-ঘর নির্মাণ করার ফলে রেললাইন আড়াল হয়ে যে কোন দিক থেকে ট্রেন আসলে দেখা যায় না। ফলে না দেখে রেললাইন পার হতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। গত ৮/১০ বছরে এসব রেল ক্রসিং দিয়ে রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে অন্তত ১৩ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেইসাথে আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।
এছাড়া বিভিন্ন স্থানে রেল লাইনের পাশে বিভিন্ন স্থানে লাইনের ঢালের মাটি কেটে সমান করে অবৈধভাবে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এতে একদিকে এ রুটে রেল চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে অপরদিকে নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে রেলের যাত্রী ও মালামালের। দেখা যায় যখনই এসব রেলক্রসিংয়ে কোন দুর্ঘটনা ঘটে তখনই রেল কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তারই ফলশ্রতিতে রেল ক্রসিংগুলোর উভয় পাশে অবৈধ রেলক্রসিং বলে সাইন বোর্ড স্থাপন করে। কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলোরও কোন অস্তিত্ব থাকে না। তাই সচেতন মহলের দাবি, এসব রেলক্রসিং দিয়ে হাজার হাজার মানুষের ও যানবাহন যাতে নিরাপদে রেললাইন পারাপার হতে পারে তার জন্য রেল লাইনের পাশ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও সেইসাথে গুরুত্বপূর্ণ রেলক্রসিংগুলোতে গেট স্থাপন করে গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হোক।