বিএনপি আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা চায়। তা না হলে দলটি মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নামতে পারে। দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, সরকারের আন্তরিকতা থাকলে আগামী পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যেই নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা এই অভিমত প্রকাশ করেছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
গত সোমবার রাতে রাজধানীতে দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সভায় যুক্ত ছিলেন।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের পদত্যাগ চেয়েছে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম। একই সঙ্গে ৫ আগস্ট-পরবর্তী জামায়াতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কমিটির কয়েকজন সদস্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্য, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে দীর্ঘসূত্রতাসহ সরকারের নানা কর্মকাণ্ডে নির্বাচন নিয়ে তাদের অনাগ্রহ স্পষ্ট হচ্ছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে সার্চ কমিটি গঠনের পরও নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দেওয়ায় এই সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো করতে কী সংস্কার প্রয়োজন এবং তাতে কত দিন লাগবে, তা অন্তর্বর্তী সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে। কোনো ছলচাতুরি করা যাবে না। জনগণ এই সরকারকে দীর্ঘদিন মানবে না।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে নেতারা হঠাৎ রাষ্ট্রপতির অপসারণসহ নানা ইস্যুতে সামনে আসায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁরা মনে করেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ মানুষের মৌলিক সমস্যা সমাধান নিয়ে সরকারের কাজ দেখা যাচ্ছে না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কয়েকটি খাতে সংস্কার করা উচিত, এ বিষয়টি নিয়েও ধোঁয়াশা আছে।
সংস্কার শেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে, গত সোমবার দেওয়া তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্যের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। দলের নেতারা মনে করেন, কিভাবে সংস্কার হবে, কবে সংস্কার কার্যক্রম শেষ হতে পারে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দেয়নি সরকার। এরপর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে, এই বক্তব্যের মধ্যে নির্বাচন বিলম্ব করার ধারণা পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে গতকাল মির্জা আব্বাস আরো বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সরকার কোনো কথা বলছে না। আমরা নির্বাচনের কথা বললেই আপনারা বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। এখন আমরা যদি বলি, আপনারা নির্বাচনের কথা না বলে ক্ষমতায় থাকার জন্য পাগল হয়ে গেছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে সরকার আন্তরিক হলে তাঁরা এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে সরকারের অনাগ্রহ তাঁদের ভাবাচ্ছে। এ জন্য আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন চাওয়ার বিষয়ে মত এসেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই। সরকারের উচিত রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা কাটিয়ে তোলা।’
সভায় প্রশাসনে বিভিন্ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্টদের পদায়ন করা হচ্ছে অভিযোগ এনে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে দায়ী করা হয়। তাঁরা মনে করেন, আলী ইমাম মজুমদারকে সরকারে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
একই সঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধ জামায়াত এক ধরনের নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন নেতা। তাঁরা বলেন, প্রশাসনে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত এক হয়ে কাজ করছে।
বৈঠকে নতুন ভোটারতালিকা তৈরির বিপক্ষে মত দিয়ে নেতারা তালিকা হালনাগাদ করা উচিত বলে মনে করেন।