বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫

তাবলীগের সাথি কুবির শহীদ আব্দুল কাইয়্যুম ছাত্রদলের শহীদের তালিকায়

কুবি প্রতিনিধি:

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী শহীদ আব্দুল কাইয়ুমকে দলীয়করণ করা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একজন কর্মী হিসেবে শহীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও সচেতন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে।

জানা যায়, আব্দুল কাইয়ুম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক ছিলেন। গত ৫ আগস্ট ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকালে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং ৬ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

কাইয়ুমের মৃত্যুর পর তাকে ছাত্রদলের কর্মী বলে দাবি করা হলেও তার পরিবার এবং ঘনিষ্ঠজনেরা এ দাবিকে অস্বীকার করেছেন। শহীদ কাইয়ুমের মা বলেন, “আমার ছেলে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। পড়াশোনা, টিউশন আর নামাজ-রোজা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আমাদের পরিবার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়।”

অন্যদিকে, তাবলীগ জামাতের সাথীরা জানিয়েছেন, কাইয়ুম তাবলীগের নিয়মিত একজন কর্মী ছিলেন এবং মাওলানা সাদ কান্ধালভীর অনুসারী ‘সাদ’ পন্থী তাবলীগ জামায়াতের সাথে যুক্ত ছিলেন।

এ বিষয়ে মামুন আবদুল্লাহ নামের এক তাবলীগের সাথী বলেন, আবদুল কাইয়ুম তাবলিগের মেহনত করত, কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না।

তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ে তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। তবে মৃত্যুর পর আমরা তথ্য পেয়েছি যে তার পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। সে জায়গা থেকে হয়ত সেন্ট্রাল পরিবারের সাথে কথা বলেছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক এম এইচ আবির বলেন, আব্দুল কাইয়ুমকে যারা খুব কাছ থেকে জানে, দেখেছে তারা বলতে পারবে। এছাড়া আমি তাকে কাছে থেকে জানি এবং আমি দেখেছি সে কোনোভাবেই পলিটিক্সের সাথে ইনভলভ না৷ সে তাবলিগে সময় দিতো, কিন্তু রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল না৷ তবে এখন তাকে যেভাবে দলীয়করণ করা হচ্ছে এটা আন্দোলনের স্পীডকে নষ্ট করে দিচ্ছে৷ এখানে তাকে দলীয়করণ করে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এভাবে তার নাম রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িয়ে অপ্রচার করা হচ্ছে। আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আব্দুল কাইয়ুমকে এভাবে দলীয়করণ করা মানে শহিদদের সাথে বেঈমানী করা।

শিক্ষার্থী কাজী শামসুল আরেফীন বলেন, “বিগত ফেসিস্টদের যে আচরণ আমরা লক্ষ্য করেছি; একাত্তরের চেতনা বিক্রি করে একটি ন্যারেটিভ তৈরি করা এবং সেই ন্যারিটিভ এর উপর ভর করে সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতার আসন অন্যায় ভাবে ধরে রাখা রাখা। ঠিক স্বাধীনতার পরেও অন্য আরেকটি সংগঠন এর ভিতর এরকম একটি চেতনা দেখা যাচ্ছে লাশ রাজনীতি নিয়ে। নিঃসন্দেহে ইহা বর্তমানে জঘন্যতম আনাচার এবং প্রথা। সেই নতুন চেতনাধারীরা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে লাশ বাণিজ্য শুরু করেছে তা এখন জনগণের কাছে স্পষ্ট। কাইয়ুম ভাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ছিলেন। একজন সম্মানিত শহীদও বাণিজ্য থেকে বাদ যাচ্ছে না। অচিরেই এই বাণিজ্যের টুটি চেপে না ধরলে ফলাফল হিসেবে আরো এক ফেসিস্ট এর উত্থান দেখতে হবে।”

এদিকে এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular