নিউজ ডেস্ক:
রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকার নগর মাতৃসদন থেকে চুরি হয়ে যাওয়া নবজাতকটি উদ্ধারের পর তার ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। বাবা-মায়ের ‘নির্ভুল’ পরিচয় নিশ্চিত হতে পুলিশ এই উদ্যোগ নিয়েছে।
বুধবার দুপুরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভাগীয় স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরিতে ১৪ দিন বয়সি ওই বাচ্চাটিসহ তার মা-বাবা মুক্তি খাতুন (১৮) ও নাসির উদ্দিনের (২২) রক্তের নমুনা ও আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক আমেনা খাতুন তাদের এই নমুনা সংগ্রহ করেন।
হাসপাতালে তাদের সঙ্গে মুক্তির বাবা মুক্তার আলী, মামা শহিদুল ইসলাম ও বাচ্চা চুরির ওই মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর শাহমখদুম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিয়ার রহমানও এসেছিলেন।
ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে এসআই মতিয়ার বলেন, আমরা প্রায় নিশ্চিত হয়েছি-বাচ্চাটি মুক্তি খাতুনেরই। তারপরেও কোনো ধরনের বিতর্ক যেন না থাকে সে জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, রামেক হাসপাতালের এই ল্যাবরেটরি থেকে নমুনা ঢাকার মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান ডিএনএ পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। সেখান থেকেই প্রতিবেদন আসবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি নওদাপাড়া এলাকার নগর মাতৃসদনে পবা উপজেলার চর শ্যামপুর এলাকার দিনমজুর নাসির উদ্দিনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের ছয় ঘণ্টা পর নবজাতকটি চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় মুক্তির মা রোজিনা বেগম থানায় মামলা করেন।
মামলার পর পুলিশ নগরীর ডাশমারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাঠকর্মী তহুরা বেগমকে (৩০) গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু বাচ্চা উদ্ধারের কোনো কিনারা করতে পারছিল না পুলিশ। এরপর গত ২৭ জানুয়ারি নগরীর টিকাপাড়া বাসার রোড এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ডিবি পুলিশ নবজাতকটিকে উদ্ধার করে।
এ সময় শাহিন আক্তার ওরফে শুভ্রা (৩২) নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুভ্রা জেলার বাগমারা উপজেলার মান্দিয়াল গ্রামের এরশাদ আলীর মেয়ে। তার স্বামী ডা. আক্তারুজ্জামান রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে কর্মরত। আর শুভ্রা নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নগরীর আলুপট্টি ক্যাম্পাসের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছিলেন। বাচ্চা চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পরদিন কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে শিশুটিকে মুক্তি খাতুনের জিম্মায় দেওয়া হয়। আর শুভ্রাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ বুধবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মতিয়ার রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে শুভ্রা বাচ্চাটিকে চুরির কথা স্বীকার করেছেন। তার সঙ্গে তহুরার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও জানিয়েছেন। তাই মামলার অভিযোগপত্র থেকে তহুরাকে বাদ দেওয়া হবে। আর আদালতের আদেশ অনুযায়ী শুভ্রাকে আবার আদালতে তোলা হবে। তখন তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন।