নিজস্ব প্রতিনিধি, টেকনাফ : মিয়ানমারের মরন নেশা ইয়াবা কিছুতেই থামছে না। নাফনদীর বিভিন্ন সীমান্ত ফাঁড়ি দিয়ে প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসছে লক্ষ লক্ষ ইয়াবা। এই ইয়াবার সাথে বেশির ভাগ মালিকবিহী, তার পাশাপাশি ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে প্রশাসনের সদস্যরা যতই কঠোর হচ্ছে ততই ইয়াবা পাচারকারীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইয়াবা পাচারকারীরা প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে তাদের এই পাচার কাজ অব্যাহত রেখেছে। উপজেলা প্রশাসনের সদস্যদের হাতে লক্ষ লক্ষ ইয়াবাসহ ধরা পড়ছে বেশ কিছু ইয়াবা পাচারকারী। কিন্তু এই সমস্ত ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত মুলহোতারা বার বার থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আরো জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার নাফনদীর উপকুলীয় ঘেষা সাবরাং ইউনিয়নে ইয়াবা পাচারকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা এই উপকুলীয় ইউনিয়ন থেকে উদ্ধার করেছে প্রায় ৪৫ লক্ষ ইয়াবা। অথচ এই ইয়াবা গুলোর সাথে জড়িত মুলহোতারা এখনো অধরা। এদিকে টেকনাফ উপজেলার মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর প্রদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত ৬ মে কক্সবাজারের আওয়ামীলীগের এক বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইয়াবা ব্যবসায়ীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওয়াতাই নিয়ে আসতে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন। এর পর গত ২৪ মে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাদক পাচার, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বিশাল এক আলোচনা সভায় অংশ গ্রহন করেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রধান আইজিপি শহীদুল হক। সেই দিনের অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাদক পাচারকারীদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে পুলিশ সদস্যদেরকে নির্দেশ প্রধান করেন। সেই সুত্র ধরে টেকনাফ থানার পুলিশ সদস্যরা ইয়াবা পাচারকারীদের আইনের আওয়াতাই নিয়ে আসতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। গতকাল ১০ জুন টেকনাফ থানার পুলিশ সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাবরাং ইউনিয়নের আলীর ডেইল এলাকার মৃত সৈয়দ হোসেনের পুত্র শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রলয়ের তালিকাভোক্ত আবদুল করিম (৩৮) কে ৪০ হাজার ইয়াবা আটক করতে সক্ষম হয়। এই ইয়াবা গুলোর সাথে জড়িত থাকার অপরাধে আরো দুইজনকে পলাতক আসামী করা হয়েছে। তারা হচ্ছে সাবরাং মন্ডল পাড়া এলাকার মমতাজ মিয়ার পুত্র সোলমান (৪০) একই এলাকার কবির আহম্মদ প্রকাশ তালা কবিরের পুত্র নুরুল আলম (৩২)।
এলাকাবাসী সুত্রে তথ্য নিয়ে জানা যায়, সাবরাং উপকুলীয় বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ইয়াবা পাচারকারীদের সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে। পুলিশের হাতে আটক হওয়া শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আবদুল করিমের নেতৃত্বে রয়েছে বিশাল এক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের অন্যন্যা সদস্যরা হচ্ছে- সাবরাং ইউনিয়নের মৃত সৈয়দ আহম্মদের পুত্র মোয়াজ্জেম হোসেন দানু মেম্বার, মুন্ডার ডেইল এলাকার শাহাব আলীর পুত্র রশিদ মিয়া, একই এলাকার সৈয়দ আহম্মদের পুত্র হাসান আহম্মদ, আবদু রকিমের পুত্র নুরুল ইসলাম প্রকাশ কান পুইজ্জা, মৃত সোনা আলীর পুত্র আবদু জালাল, মৃত জালালের পুত্র হেলাল উদ্দিন, সৈয়দ আলমের পুত্র সোনা মিয়া, মৃত আলী আহম্মদের পুত্র হাছু মিয়া, চান্দলী পাড়ার মুক্তার আহম্মদের পুত্র হোসন আহম্মদ, মো: হোসেনের পুত্র আবুল মনজুর , আলীর ডেইলের মৃত সৈয়দ করিমের পুত্র জাফর আহম্মদ খুইল্যা মিয়া, মুজিব, সুত্রে আরো জানা যায়, ফজল মাঝি, ভুট্রো মাঝি ও হাসন মাঝিসহ আরো বেশ কয়েকজন ফিশিং ট্রলারের মাঝি এই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত হয়ে ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে।
এব্যাপারে এলাকারবাসীর দাবি, এই সমস্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদেরকে আইনের আওয়াতাই নিয়ে আসলে সাবরাং উপকুল ইউনিয়ন থেকে মাদক পাচার অনেক কমে আসবে।
শীর্ষ ইয়াবা গডফারদার আবদুল করিম আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মাইন উদ্দিন আরো জানান, ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার প্রতিরোধে পুলিশ সদস্যদের অভিযান চলছে এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। তার পাশাপাশি চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদেরক আটক ও মাদক পাচার প্রতিরোধ করতে আইনি প্রক্রিয়ায় যা যা করনীয় আছে সব কিছু কঠোর হস্তে প্রয়োগ করা হবে।