নিউজ ডেস্ক:
বাঁধাকপিটা না খেয়ে সাজিয়ে রেখে দিতে হল আলমারিতে। কারণ এটা যে প্লাস্টিকের! ভাগ্যিস রান্না করে খেয়ে নেয়নি কলকাতার কোন্নগরের দীপককুমারের পরিবার।
আর এ ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
কোন্নগরে থাকেন দীপককুমার সরকার। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে বাজার করছেন দীপকবাবু। রীতিমতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বেগুন, ঢেঁড়শ থলিতে ভরেন তিনি। বৃহস্পতিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পুরনো বিক্রেতার কাছ থেকে দরদাম করে বড় সাইজের বাঁধাকপি ব্যাগে ভরেন। বাড়িতে এনে কাটতে গিয়েই বিপত্তি। কিছুতেই বঁটিতে জুত করে কাটা যাচ্ছিল না। অদ্ভুত আওয়াজ হচ্ছিল।
দীপকবাবুর ছেলে দিব্যেন্দু জানিয়েছেন, ‘বাঁধাকপি বঁটি দিয়ে কাটা যাচ্ছে না শুনে আমি চমকে যাই। বাঁধাকপিটা হাতে নিয়ে দেখতেই সন্দেহ হয়। সবুজ রংটা যেন কেমন অদ্ভুত। ’ পাতাগুলো ধরে টানতেই আরও চমক। টানলেই লম্বা হচ্ছে বাঁধাকপির পাতা। নিশ্চিত হতে দেশলাই জেলে বাঁধাকপির পাতার সামনে ধরতেই চিড়চিড় আওয়াজ। যেন প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ পুড়ছে। দিব্যেন্দুবাবু বুঝতে পারেন বাঁধাকপি বলে বাবা যেটি ব্যাগে ভরেছেন তা আদতে অন্য জিনিস।
দিন কয়েক আগে নকল ডিম, নকল চালের খবর মিলেছিল। এবার কোন্নগরে পাওয়া গেল প্লাস্টিকের বাঁধাকপি। নকল বাঁধাকপি নিয়েই বাজারে ছুটেছেন দীপকবাবু। ‘বিক্রেতাকে বলেছি এগুলো কী বিক্রি করছ? এতো মানুষ মারার শামিল। ‘ কাঁচুমাচু মুখে বিক্রেতার জবাব, ‘আমি কী করবো বাবু। আমি তো বানাইনি। ‘ তবে কে বানাচ্ছে প্লাস্টিকের বাঁধাকপি? নকল ডিমের সময় রটে গিয়েছিল চীনই রয়েছে সমস্ত নকল জিনিস বানানোর পিছনে।
যদিও বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তপনকুমার মাইতির কথায়, ‘শুধু চীনই নকল ডিম, নকল বাঁধাকপি তৈরি করে বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে, এতটা সরলীকরণ করাটা ঠিক নয়। আমাদের এখানকার অনেক ব্যবসায়ীও এ জিনিস করতে পারে। ’ এসমস্ত জিনিস ঠেকাতে রাজ্যের ফুড ইনস্পেকটরদের বাজারে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে পরিদর্শনের পরামর্শ দিয়েছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা।
সবজিতে রং মেশানোর অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই আসছিল। এবার নকল বাঁধাকপি বাজারে আসতে সজাগ ক্রেতারাও। নকল বাঁধাকপি কীভাবে তৈরি হচ্ছে তা জানতে উদগ্রীব গবেষকরা। তপনবাবুর কথায়, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি বাঁধাকপির নমুনাটি নিয়ে আসা হয়, সেক্ষেত্রে আমরা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখতে পারি ঠিক কী উপাদান রয়েছে ওতে। তাতে এটাও বোঝা যাবে কোন উপায়ে সহজে বাজারে গিয়ে নকল বাঁধাকপি চিনবেন। ’
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন