স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহে স্বাধীনতার পর থেকে কোনো নদীই খনন করা হয়নি। প্রশাসনের চরম উদাসীনতায় বছরের পর বছর নদীগুলোতে উজানের পলি জমে ভরাট হয়ে পড়ায় আজ তা কেবলমাত্র মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীগুলোতে বছরে মাত্র ৩-৬ মাস পানি থাকে। এরপর সারাবছরই দখল উৎসবে মেতে ওঠে নদী তীরের বসবাসকারী প্রভাবশালীরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ নদীগুলো নিয়ে ভাবার কারও কোনো সময় নেই।
সরেজমিনে জানা গেছে, একসময় নদীতে পাওয়া যেত মিঠা পানির মাছ, চলাচল করতো বড় বড় নৌকা। যার সূত্র ধরে নদী পাড়ে গড়ে উঠেছিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদীর পানি দিয়ে করা হত চাষাবাদ। কিন্তু এ চিত্র এখন একেবারেই উল্টো।
শৈলকূপার কুমার নদী তীরবর্তী বাসিন্দা লিপি খাতুন জানান, নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে বড় বড় চর। করা হচ্ছে ধান, সরিষা, কালাই, মশুরি, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ। নদীতে কমেছে মিঠা পানির মাছ। বর্ষা মৌসুমে নদীতে কিছুটা পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে হেঁটেই চলাচল করা যায়।
নদী পাড়ের সুবল দাস জানান, খননের অভাবে ঝিনাইদহে অধিকাংশ নদ-নদী পরিণত হয়েছে খালে। ফলে নদী তীরে জেগে ওঠা চরে করা হচ্ছে চাষাবাদ। এখন ১০০ ভাগের মাত্র ১ ভাগ মাছ পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এমন চরম উদসীনতা আর কোথাও চোখে পড়ে না।
কথিত আছে, ঝিনাইদহের নবগঙ্গা নদীতে পাওয়া যেত পর্যাপ্ত ঝিনুক। সেই সূত্র ধরেই জেলার নামকরণ করা হয় ঝিনাইদহ।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ১২টি নদী। এসব নদীগুলো ছিল প্রমত্তা। ঝিনাইদহের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদীগুলো হলো নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, বেগবতি, গড়াই, ইছামতি, ডাকুয়া, কপোতাক্ষ, কালীগঙ্গা, কোদলা, ফটকী ও বুড়ী। যার আয়তন ১৬শ ৪১.৭৫ হেক্টর।
পরিবেশবাদী মাসুদ আহমেদ সনজু সাংবাদিকদের জানান, জেলার সব নদীগুলোরই একই অবস্থা। এসব জেগে ওঠা চরে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে নদী দখল। নদী পাড়ের প্রভাবশালী বাসিন্দারা দেদারছে মেতে উঠেছে নদী দখল উৎসবে। যে কারণে একদিকে যেমন কমছে নদীর প্রশস্ততা, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ছে মাছসহ জলজ প্রাণী। নদীগুলো অতি দ্রুত খনন ও দখলমুক্ত করে এর স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে আনা জরুরি।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কনক কুমার বিশ্বাস জানান, ঝিনাইদহের নদ-নদীগুলো পুনঃখননের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হলে পুনঃখনন শুরু করা হবে। তবে এখনও কোনো মহাপরিকল্পনা নেই।