জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ জেলা জুড়েই গ্রামবাংলার এক অপরুপ ঐতিহ্য গরু দিয়ে ধান মাড়াই এখন আর দেখা যায় না। জেলা জুড়ে কৃষকের সবুজ শ্যামল ধানের ক্ষেত সোনা রং ধারণ করছে। পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে বাতাস ভরে উঠেছে। মাঠে-মাঠে, ঘরে-ঘরে চলছে ধান কাটার উৎসব। দিনেতো হাজারো ব্যস্ততা আছেই তার ওপর রাতভর চলে ধান মাড়াইয়ের কাজ। এতো ব্যস্ততার পরেও কৃষক তার কৃষাণ বধূ নিয়ে মহাখুশিতে দিন কাটায়। গোলাভরাধাননিযে কৃষক-কৃষাণীরা মেতে উঠে নবান্ন উৎসবে। নতুন চালের ভাত, পিঠা-পুলি, আর পায়েসের গন্ধ ভেসে আসে প্রায় প্রতিটি ঘর থেকে। তবে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে অপার আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে আমাদের কৃষিক্ষেত্রে। ধান বপন, রোপণ, ধান কাটা, মাড়াই করা এমনকি ধান থেকে চাল করা নিয়ে প্রত্যেকটা কাজই সম্পন্ন করা হচ্ছে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার দ্বারা। গরু আর লাঙ্গল টানা সেই জরার্জীণ কৃষককে এখন আর দেখা যায় না। হালের গরু ছেড়ে কৃষক এখন সাহায্য নেয় ট্রাক্টরের। পাঁচ মিনিটেই জমি প্রস্তুত। বৃষ্টির জন্যে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। পাম্পের সাহায্যে সেচ কাজ করে পানির চাহিদা মিটানো হচ্ছে। প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন সব কীটনাশক বাজারে আসছে। এখন আর কৃষককে রৌদ বৃষ্টিতে ভিজে ধানের বীজ তার শষ্যক্ষেতে ছিটিয়ে দিতে হয় না। জমিতে বীজ ছিটানোর জন্যে এখন আছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। ধানের পাতা পরীক্ষা করে এ জমির উপযোগী কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। ধানের আগাছা পরিষ্কার করার জন্যেও ব্যবহার হচ্ছে এক ধরনের দাঁতালো যন্ত্র। ধান কাটার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে ধান কাটার যন্ত্র। দিনব্যাপী চাষাকে আর গায়ের ঘাম ঝরিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে না। ধান কেটেই কি শেষ? ধানতো ঘরে তুলতে হবে। মাড়াই করতে হবে। আগে গাঁয়ের বৌ ঝিরা পিটিয়ে, পা দিয়ে মাড়িয়ে ধান নিতো।
কিন্তু এখন সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে সেই পিটিয়ে বা গরুর পা দিয়ে মাড়িয়ে ধান নেয়া অনেকাংশেই কমে এসেছে। এখন হরেক রকমের ধান মাড়াইয়ের যন্ত্র বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দিয়ে আসছে। কাজ কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। আরো কিছুটা ব্যস্ততা এখনো আছে। ধান থেকে তো চাল করতে হবে। তো চালটা কি মায়েরা, চাচীরা রাত জেগে ঢেঁকিতে দুলে দুলে করবে? মোটেই না ধান থেকে চাল করার জন্যে মেশিনতো আমার ঘরের সামনেই হাজির। তাহলে আর এতো কষ্ট কিসের? আর তাছাড়া শষ্য রোপণ থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত সবকিছুই করা যায় ক্ষেতের জমিতে। বিজ্ঞান এবং আধুনিকতা এই দুইয়ে মিলে আমাদের কৃষি কাজে এনে দিয়েছে আমূল পরিবর্তন। তবে এটাও ঠিক বিজ্ঞানের এই নব নব আবিষ্কারের ভিড়ে আমরা হারাতে বসেছি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে, আমাদের স্বক্রিয়তাকে, আমাদের সত্তাকে। আর এই বৈজ্ঞানীক যন্ত্রপাতির প্রত্যেকটিই খুবই ব্যয়বহুল। আর আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষকই দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে। তারা এখনো মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের অন্ন যোগান দেয়। তবে আস্তে আস্তে সবই আমাদের করায়ত্ত হবে। বিজ্ঞানের এই আবিষ্কারগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করেছে সহজ, সাবলীল আর অর্থনীতির চাকাকে করেছে সমৃদ্ধ। ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলা সহ মহেশপুর উপজেলার এসবিকে, ফতেপুর, মান্দারবাড়ীয়া, বাশঁবাড়ীয়া, শ্যামকুড়সহ মোট ১২ টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকটি পরিবারে এখনো গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে। তারা বলেন, বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মতো আমাদের উপজেলাতেও আগে প্রতি ঘরে ঘরে গরু দিয়ে ধান মাড়াই হতো। এখন মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই হয়। এতে ব্যয় একটু বেশি হলেও সময় বাঁচে। গরু দিয়ে ধান মাড়ানো সম্পর্কে তারা বলেন, ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো গরু দিয়ে ধান মাড়াই করছেন এলাকার কতিপয় লোক।