জেলার চাহিদা মিটিয়ে কাঁচা মরিচ এখন রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়
জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহ থেকেঃ ঝিনাইদহের বাজার গোপালপুরে কাঁচা মরিচের জমজমাট হাট বসানো হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পাইকারী কেনা বেচা চলে এ হাটে। এখান থেকে পাইকারী ব্যাপারীরা প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ট্রাক কাঁচা মরিচ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের বাজার গোপালপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, বাজারটিতে কাঁচা মরিচের বিশাল জমজমাট হাট বসানো হয়েছে। মাত্র কয়েক বছর হলো বাজার গোপালপুর সাধারন হাটে কাঁচা মরিচের হাট বসেছে। এরই মধ্যে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে কাঁচা মরিচের বিশাল এ হাটের খবর। কথা হয় হাট মালিক ইছাহাক আলীর সাথে। তিনি জানান, হাটবাজার ইজারা নেয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এলাকায় প্রচুর কাঁচা মরিচের চাষ শরু হয়েছে। এখানে কাঁচা মরিচের পাইকারী হাট বসানো হলে এলাকার চাষীদের কষ্ট করে দুরের হাটে যেতে হবেনা। এতে করে চাষীরা যেমন সুবিধা পাবে, তেমনি ভাবে হাটের টোল আদায়ও বেশী হবে। তাই তিনি কাঁচা মরিচের পাইকারী হাট লাগানোর উদ্দ্যোগ নেন। তিনি আরো জানান, বর্তমানে এই হাটে দুরদরান্ত থেকে চাষীরা তাদের ক্ষেতের মরিচ নিয়ে এসে সরাসরি পাইকারী ব্যাপারীদের কাছে ন্যায্য মূল্য বিক্রি করে থাকেন। প্রতিদিন বাজার বসার কারণে চাষীদের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়না। এই হাটে প্রায় ৫০ থেকে ৬০জন শ্রমিক কাজ করে। মরিচ ওজন করা থেকে শুরু করে বস্তায় ভরা ও গাড়ী লোড দেয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব থাকে। এতে করে তারা বস্তা প্রতি ৫০ টাকা মজুরী পেয়ে থাকেন। বাজারটিতে পার্শ¦বর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার হিজল গাড়ী, আন্দুলবাড়িয়া, গবরগাড়া, তেঘরী, বাটিকা ডাঙ্গা, তিতুদোহা, হুলিয়ামারি, হরিনাকুন্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া, নারয়নকান্দি, হিজলী, কাপাশাটিয়া, শাখারীদহ, গবরাপাড়া, সোনাতনপুর, কোটচাঁদপুর উপজেলার তালশার, দোড়া, পাচলিয়া, দয়ারামপুর, ধোপাবিলা, লক্ষীপুর, তালসার, সদর উপজেলার মধুহাটি, সাধুহাটি, হলিধানী এবং সাগান্না ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের চাষীরা তাদের ক্ষেতের মরিচ বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। মরিচ চাষী মির্জাপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মেীসুমে ১৬ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। এবার মরিচের দাম ভালো, যদি বর্ষায় গাছ মরে না যায় তাহলে মরিচ চাষে প্রচুর লাভবান হবেন তিনি। ওয়াড়িয়া গ্রামের কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, ৫বিঘা জমিতে তিনি মরিচের আবাদ করেছেন। ২ সপ্তা আগে প্রতি কেজি মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে মরিচ বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম যদি থেকে যায় তাহলে ৫বিঘা জমিতে ৫লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারবেন তিনি। হাটে আমদানীকৃত মরিচ ব্যাপারীরা কৃষকদের কাছ থেকে কিনে ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ি, বরিশাল,মানিকগঞ্জ, সাভার, ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। কথা হয় পাইকারী ব্যাপারী চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের আনোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি জানান, বাজার গোপালপুর হাট থেকে প্রতিদিন কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ২ ট্রাক করে কাঁচা মরিচ ক্রয় করেন। এই মরিচ ফরিদপুর,মাদারীপুর,বরিশাল,মানিকগঞ্জ,ঢাকা, চিটাগাং ও সিলেটে বিক্রি করেন। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি খরিদ করার কারনে ব্যবসায় তিনি ভালো লাভবান হচ্ছেন। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মেজবাহ আহামেদ জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে সদর উপজেলার দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চালে কৃষকেরা কাঁচা মরিচ চাষে ব্যাপক ঝুকে পড়েছে। মরিচ চাষ লাভজনক ফসল। বর্তমানে দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বাজার গোপালপুর হাটে প্রতিদিন বাজার বসার কারনে কৃষকেরা অনেক সুবিধা ভোগ করছে। মরিচ চাষ পরিচর্চার জন্য কৃষকদের পাশে থেকে সব সময় ভালো মরামর্শ দিয়ে থাকেন। আগামী বছর আরও বেশী মরিচ চাষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।