স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নেবুতলা গ্রামের জঙ্গি আস্তানার বাড়ির মালিকের ছেলে শামীম ঝিনাইদহ অঞ্চলের নব্য জেএমবির সমন্বয়কারী। নেবুতলার ওই আস্তানায় অভিযান সমাপ্ত ঘোষণার পর পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ সোমবার এই তথ্য জানান। সোমবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে শুরু হয়ে বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে এ অভিযান শেষ হয়। অভিযান শেষ দিদার আহমেদ জানান, রোববার পাওয়া ৭টি গ্রেনেড ও একটি বোমার বিস্ফোরণ করে নিস্ক্রিয় করা হয়। এ ছাড়া একটি নাইন এমএম পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ওই বাড়িতে বসবাসকারী শামীম নব্য জেএমবির সদস্য। তার দেওয়া তথ্যমতে, মহেশপুরের বজরাপুর ও নেবুতলা গ্রামে অভিযান চালানো হয়। শামীম এ এলাকায় সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন। শামীমকে ৫ মে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শামীমের ভাই হাসানকে আমরা গ্রেফতার করিনি। অন্য কোনো বাহিনী গ্রেফতার করেছে কি না জানি না।’ রেঞ্জ ডিআইজি আরো জানান, রোববার ঝিনাইদহের মহেশপুরে নিহত জঙ্গিদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত একজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। নিহত জঙ্গি তুহিনের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, জঙ্গি আস্তানার আশপাশের বাড়ির লোকজনের নিজ বাড়িতে ফিরতে আর কোনো বাধা নেই। সোমবার সকালে জঙ্গি আস্তানার আশপাশের ২০০ গজের বাসিন্দাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে বের হয়ে যেতে বলা হয়। আশাপাশে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। কয়েকদিন আগে নেবুতলায় মৃত শরাফত হোসেনের বাড়িতে এ জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে শরাফত হোসেনের দুই ছেলে শামীম (২২), হাসান (৩৫) ও তাদের এক বন্ধুকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। বন্ধুটির নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ বন্ধু প্রায় ৭ মাস আগে এসে তাদের বাড়িতেই থাকতো। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
নেবুতলা গ্রামের হায়দার আলী জানান, মৃত শরাফত আলী প্রায় ২০ বছর আগে সদর উপজেলার কামারকুন্ডুু এলাকা থেকে নেবুতলায় এসে বসবাস শুরু করেন। প্রায় ১০ বছর আগে মারা যান শরাফত হোসেন। শরাফত হোসেনের বড় ছেলে হাসান রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আর ছোট ছেলে শামীম ঝিনাইদহ পলিটেকনিকে পড়াশোনা করে। তিনি আরো জানান, শরাফত হোসেনের দুই ছেলেকে কখনো কোনো আড্ডা দিতে দেখিনি। জসিম উদ্দিন নামের একজন বলেন, ‘শরাফত হোসেনের দুই ছেলে যে জঙ্গিবাদে জড়িত এটা পুলিশের অভিযান দেখেই টের পেলাম। এর আগে এমন কোনো কার্যক্রম দেখিনি। শরাফত হোসেনের ছোট ছেলে শামীম অনেক মেধাবী। পড়ালেখায় সে অনেক ভালো। আর বাবা শরাফত মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে হাসান রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসারের হাল ধরেন।’
খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. দিদার আহমেদ রোববার দুপুরে মহেশপুরের বজরাপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বজরাপুরের আস্তানায় আত্মঘাতী হামলায় দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এডিসি নাজমুল ইসলাম, এসআই মুজিবুর রহমান ও ডিএসবির এসআই মহসীন। এরপর রাতে ওই আস্তানার অভিযান সমান্ত ঘোষণা করেন তিনি। ডিআইজি মো. দিদার আহমেদ আরো জানান, সদর উপজেলার নেবুতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৮টি বোমা, ১টি নাইন এমএম পিস্তল ও ৬টি গ্রেনেড পাওয়া গেছে। সোমবার সকাল থেকে সদর উপজেলার নেবুতলায় আবারো অভিযান চালানো হবে।
এর আগে ২২ এপ্রিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন সাউথ প’ বা দক্ষিণের থাবা। প্রায় ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের অভিযানে ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে বিস্ফোরক তৈরি রাসায়নিক ভর্তি ২০টি ড্রাম, একটি সেভেন পয়েন্ট সিক্স বোরের পিস্তল, একটা ম্যাগাজিন, সাত রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পাঁচটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়। অপারেশন ‘সাউথ প’ সমাপ্ত ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ জানান, বাড়িটিকে জঙ্গিদের বোমা তৈরির কারখানা বলা যেতে পারে। এ বাড়িতে তিন-চার জন জঙ্গি ছিল। তারা আগেই পালিয়ে গেছে। বাড়িটিতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিভাগীয় পর্যায়ের লোকজন আসা যাওয়া করত বলেও জানান তিনি।