স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর বাজারের কপোতাক্ষ নদের পাড়ে নীল কুঠি কাছারি বাড়ির জায়গাটি বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান ইকো পার্ক করার উদ্যোগ গ্রহন করা এবং ১৬ সালের ৩১ অক্টোবর এলাকার কিছু লোকজন নিয়ে ইকো পার্ক হিসেবে ঘোষণা দেয় উপজেলা প্রশাসন। গত ৭ মাসে কোনো কার্যক্রম নেই। সেটি এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
কপোতাক্ষ নদের পাড়ে খালিশপুর গ্রাম। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের নামে বর্তমানে এই গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে হামিদনগর। এই গ্রামে তার নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়েছে এবং করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান কলেজ যা বর্তমানে সরকারি করণ করা হয়েছে। কলেজের সাথে স্মৃতি পাঠাগার এবং এর সামনে সমাধি করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ,র মায়ের। গত ১৬ সালের ৩১ অক্টোবর সকালে উপজেলা প্রশাসন এলাকার মানুষ নিয়ে নীল কুঠির কাছারি বাড়িকে ইকো পার্ক তৈরি করার ঘোষণা দেয়। এখানে প্রায় সরকারের ৩৭ বিঘা জমি রয়েছে। গত ৭ মাসে ওই ইকো পার্কের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশাফুর রহমান এটিকে তড়িঘড়ি করে ইকো পার্ক করার ঘোষণা দেয়ার পর সরকার বা জন প্রতিনিধিরা কোনো কার্যক্রম করেনি। এটি ঘোষণা দেয়ার পরপরই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে দ্রুত সৃষ্টি হয়। এরপর একে একে মহেশপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ খান ও স্থানীয় এমপি মো. নবী নেওয়াজের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি হয়। এ সকল রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ইকো পার্কটি আর আলোর মুখ দেখেনি। সেটি কাগজে কলমে ফাইল বন্দি হয়ে পড়ে। কিন্তু পার্কটি আধুনিক মানের নির্মাণ করা হলে পর্যটকদের কাছে দৃষ্টি নন্দন হয়ে উঠতো। যার রয়েছে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য।
ঐতিহাসিকদের মতে, ১৮১১ সালে কোটচাঁদপুরের দুতিয়ার কাঠি কুঠির মালিক মি. ব্রিজবেন খালিশপুরের নীল কুঠিরটি স্থাপন করেন। সে সময় খালিশপুর থেকে সাঁগরদাড়ি হয়ে কোলকাতা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করতো। তৎকালে খালিশপুরের কুঠি কাছারি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কোলকাতা থেকে অনেক কুঠিয়াল সাহেব নদী পথে মাঝে মাঝে কাছারি বাড়িতে আসতেন।
১৮০৫ সালে যশোর জেলায় অনেক ইংরেজ নীল ব্যবসায়ীর আগমন ঘটে এবং তারা বিভিন্ন স্থানে নীল কুঠি স্থাপন করেন। একাধিক নীল কুঠি নিয়ন্ত্রিত হতো কনসারণ অফিস দ্বারা সে সময় কাঠগড়া কনসারণ অফিসের অধীন ছিলো খালিশপুর নীল কুঠির। দক্ষিণ মুখি কুঠি ভবনটির দৈর্ঘ্য ১২০ ফিট, প্রস্থ ৪০ফিট ও উচ্চতা ৩০ ফিট । দক্ষিণ দিকে প্রশস্থ বারান্দা। ১২ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন এটি। দেয়াল ২০ ইঞ্চি পুরু। নিচের তলার থেকে ওপরের তলার কক্ষগুলি আয়তনে বড়। চুন, সুড়খি ও পাকা ইটের তৈরি।
২০০ বছরের পুরতন ভবনটি এখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। গোসল করার পাঁকা সিঁড়ি নদীর নিম্ন পর্যন্ত নামানো যা এখনও ভগ্নদশা অবস্থায় আছে। ১৯৯৯ সালে কলেজ এবং ২০০৭ সালে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে যাদুঘর স্থাপনের পর খালিশপুরের সুনাম বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু নীলকুঠিয়ালদের অত্যাচার নির্যাতনের মর্মান্তিক কাহিনী এ অঞ্চলের মানুষ এখনও ভুলে যায়নি। কেননা ধ্বংস প্রায় নীল কুঠি তাদের মনে অতীত নিপীড়নের কথা জাগিয়ে তোলে। জানা গেছে, বৃটিশ শাসনামলে খালিশপুরে দুটি পতিতা পল্লি ছিলো যার পৃষ্ট পোষকতায় ছিলো ইংরেজরা। ইংরেজ সাহেবদের মনোরঞ্জনের জন্য বহু পতিতা এখানে বাস করতো। নদীর কুঠি সিঁড়িতে ইংরেজরা ও পতিতারা একই সাথে গোসল করতো। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরও কিছু সংখ্যক পতিতা এখানে ছিলো।
১৯৫৪ সালে স্থানীয় লোকজন তা উচ্ছেদ করে দেয়। কতশত করুন কাহিনীর ছাপ এই কুঠির দেয়ালে লেগে আছে তা আজ কেউ বলতে পারে না। ২০০৭ সালের দিকে কুঠি বাড়িটি নিলাম দেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছিলো। এসময় স্থানীয় জনতা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মিলে মানববন্ধন করে গণমাধ্যমের সহায়তায় সে সময় নিলাম থেকে রক্ষা করা হয়। মহেশপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার অজিয়ার রহমান তৎকালীন প্রতœতত্ত বিভাগের কাছে কুটি বাড়িটি সংরক্ষণ করার জন্য পত্র প্রেরন করেন। এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান ইকো পার্ক করার উদ্যোগ গ্রহন করায় এলাকার মানুষ খুবই খুশি হলেও বর্তমানে হতাশায় রয়েছে। এক সময়কার অত্যাচার বেদনার স্থানটি হবে আনন্দ খুশির স্থান। এটিই এলাকার মানুষ কামনা করে।