যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করেছেন ওহাইওর প্রখ্যাত রিপাবলিকান নেতা জেডি ভ্যান্স। যিনি নির্বাচনে ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান সমর্থক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হওয়ায় এখন প্রশ্ন উঠেছে ভ্যান্স কী ভাইস প্রেসিডেন্ট নাকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে চলেছেন।
ভ্যান্সের রাজনৈতিক যাত্রা
একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য এবং অতীতে ট্রাম্পের সমালোচনার জন্য পরিচিত জেডি ভ্যান্সের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে, যখন তিনি ওহাইয়োতে ফিরে এসে সিনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে শুরু করেন। তবে তাঁর পেছনে শক্তিশালী আর্থিক সমর্থন ছিল। একাধিক বিতর্কিত মন্তব্যের পর তিনি ট্রাম্পের প্রতি তাঁর আগের সমালোচনার জন্য ক্ষমা চেয়ে রিপাবলিকান শিবিরে নিজের অবস্থান শক্ত করেন। এরপর ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ নীতির প্রতি তার সমর্থন জানিয়ে তিনি সিনেটে পা রাখেন।
হিলবিলি এলেজি এবং পরিচিতি
ভ্যান্সের পরিচিতি মূলত তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ‘হিলবিলি এলেজি’ এর মাধ্যমে। এই বইতে তিনি নিজের শৈশব এবং অ্যাপালাচিয়া অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের জীবনযাত্রার কথা তুলে ধরেন। তাঁর লেখা বইটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয় এবং এর ওপর ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়, যা নেটফ্লিক্সে প্রচারিত হয়। এই বইয়ে ভ্যান্স সমাজের নানা ধরনের অস্বীকৃতি, বেকারত্ব এবং সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতার বিষয়গুলো রক্ষণশীল দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছেন।
ভ্যান্সের ভারতীয় সংশ্লিষ্টতা
ভ্যান্সের একটি বিশেষ ভারতীয় সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর স্ত্রী ঊষা চিলুকুরি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ২০১৩ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তাদের পরিচয় হয় এবং ২০১৪ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তানও রয়েছে।
২০২২ সালে, যখন রিপাবলিকান সিনেটর রব পোর্টম্যান পুনর্নির্বাচনের জন্য প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন ভ্যান্সের রাজনৈতিক পথচলা বাস্তবায়িত হতে শুরু করে। তাঁর একাধিক সমালোচনামূলক মন্তব্যের পর, ট্রাম্পের নীতির প্রতি সহমত পোষণ এবং ক্ষমা চাওয়ার ফলে তিনি রিপাবলিকান শিবিরে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন। এর পর, ভ্যান্স দ্রুত সিনেট নির্বাচনে জয়ী হন এবং ট্রাম্পের কাছ থেকে শক্তিশালী সমর্থন লাভ করেন।
ভ্যান্সের পররাষ্ট্রনীতি ও বিতর্কিত মন্তব্য
ভ্যান্স সিনেট সদস্য হিসেবে কনজারভেটিভ (রক্ষণশীল) নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছেন। তিনি ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন সরকারের ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এবং গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে একাধিক বিল পাস করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি অভিবাসন কমানোর পক্ষে এবং আমেরিকান ড্রিমের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থান বেশ তীব্র ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পথে
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই ভ্যান্সের নাম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। তাঁর সাবেক কনজারভেটিভ অবস্থান এবং ট্রাম্পের নীতির প্রতি দৃঢ় সমর্থন তাকে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট নাকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্কিন দপ্তরের দায়িত্ব সামলাবেন সে বিষয়ে স্পষ্ট হওয়া যায়নি।