নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াতে ইসলামের ২৮ নারী সদস্যের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রিমান্ড শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসাইন এ আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- জামায়াতের নারী বিভাগের সেক্রেটারি শাহনাজ বেগম (৫৬), রোকন পর্যায়ের নেত্রী নাঈমা আক্তার (৫৫), উম্মে খালেদা (৪০), জোহরা বেগম (৩৫), সৈয়দা শাহীন আক্তার (৪০), উম্মে কুলসুম (৪২), জেসমিন খান (৪৩), খোদেজা আক্তার (৩২), সালমা হক (৪৫), সাকিয়া তাসনিম (৪৭), সেলিমা সুলতানা সুইটি (৪৮), হাফসা (৫৫), আকলিমা ফেরদৌস (৩৭), রোকসানা বেগম (৫১), আফসানা মীম (২৫), শরীফা আক্তার (৫৩), রুবিনা আক্তার (৩৮), তাসলিমা (৫২), আসমা খাতুন (৩৫), সুফিয়া (৪১), আনোয়ারা বেগম (৪৬), ইয়াসমিন আক্তার (৪১), সাদিয়া (৪৫), ফাতেমা বেগম (৫১), উম্মে আতিয়া (৪৬), রুমা আক্তার (৩২), রাজিয়া আক্তার (৪২) ও রাহিমা খাতুন (৩০)।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. শরীফুল ইসলাম বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের নাম-ঠিকানা ও পদবির কথা স্বীকার করেছে। স্থানীয় তদন্তে ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একত্রিত হয়ে সরকার বিরোধী এবং ধ্বংসাত্মক কার্য পরিচালনার জন্য গোপন বৈঠক করে থাকেন এবং নতুন কর্মী এনে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সরকার বিরোধী বিভিন্ন নাশকতার কাজে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। তাদের অনেকেই এসব কাজে অংশগ্রহণ করায় বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে তদন্তে জানা যাচ্ছে। এসব তথ্যের বিস্তারিত উদঘাটনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে আসামিদের স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় জামিনে মুক্তি পেলে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে, মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে , পলাতক আসামি গ্রেপ্তার এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ষড়যন্ত্রের তথ্যাদি উদঘাটনের জন্য আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম কামাল উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক ও আবু বক্কর সিদ্দিক রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, সেদিন বাড়ির মালিক দাওয়াত দেন। দাওয়াত খেতে তারা ওই বাসায় গিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী কাজের কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। আর একজন নারী সরকার বিরোধী, ধ্বংসাত্মক কী কাজই বা করতে পারে।
হয়রানি করতে মামলা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করেন তারা বলেন, এখানে রিমান্ডের কোনো যোক্তিকতা নেই। রিমান্ড নামঞ্জুর করে জামিন দিন। আর জামিন না দিলে প্রয়োজনে আপনি তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত দুই দিনের রিমান্ড আদেশ দেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নারী পুলিশ উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন বিচারক।
প্রসঙ্গত,গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর থানা এলাকার তাজমহল রোডের ১১/৭ নম্বর বাড়ির দোতলা থেকে জামায়াতে ইসলামের ২৮ নারী সদস্যকে আটক করে পুলিশ।
তেজগাঁও জোনের ডেপুটি কমিশনার বিপ্লব কুমার বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি যে, তারা ওই বৈঠকে রাজধানীতে নাশকতা ও সরকার উৎখাতের আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বিব্রত করার পরিকল্পনা করছিল। তাদের মধ্যে সংগঠনের রোকন পর্যায়ের নেত্রী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজন রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘মোহাম্মদপুর এলাকায় জামায়াতে ইসলামের নারী সদস্যরা গোপনে বৈঠক করে এমন তথ্য আমাদের কাছে আগে থেকেই ছিল। কিন্তু তারা কোন বাসায় বৈঠক করে তা নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। গতকাল আমরা নিশ্চিত হই যে, তাজমহল রোডের বাসায় বৈঠক চলছে। খবর পেয়ে আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। প্রথম দিকে ওই বাসায় দরজায় ডাক দিলে তারা কেউ সাড়া দেয়নি। যখন আমরা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালাই তখন তারা ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়।’
বিপ্লব কুমার বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত বেশ কয়েকজন লেখকের বই পাওয়া গেছে। বেশ কিছু লিফলেট ও নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তারা শুধু ঢাকা শহর নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে বৈঠকে অংশ নিতে এসেছেন। এদের মধ্যে ডাক্তার, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এমন নারী রয়েছেন। পাশাপাশি সমাজের অনেক উচ্চ শিক্ষিত লোকের স্ত্রী আছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।