মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫
মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫

জন্ডিস হলে ওষুধ খাওয়া ছাড়াও কী কী করণীয়

নিউজ ডেস্ক:

এই সময়টা আমাদের খুবই সাবধানে থাকার সময়। বসন্ত কাল সবে যাচ্ছে আর গরম পড়তে শুরু করেছে। এই সময়ে আমাদের কিন্তু খুবই রোগ হয়। বসন্তে যেমন হাম, পক্স এসব লেগে থাকেই। তেমনই কিন্তু এই গরমে একটি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই থাকে, আর সেটি হল জন্ডিস। জন্ডিস খুবই খারাপ একটি রোগ। খারাপ এই কারণে নয় যে এটি আমাদের শরীরের বিশাল ক্ষতি করে। খারাপ এই কারণে কারণ এটি আমাদের ভিতর থেকে খুবই দুর্বল করে দেয়। আমরা প্রায় কোনও কাজই করতে পারি না। কিন্তু জন্ডিস হলেই যে শুধু ওষুধের উপর নির্ভর করে থাকলেই হবে তা নয়। ওষুধ তো দরকার, তার সঙ্গে আরও কিছু কিছু জিনিস মেনে চলা দরকার। আর তাহলেই জন্ডিসের সময়েও আমরা খানিক আরাম পেটে পারি।

জন্ডিস কেন হয়

আমাদের শরীরে বিলিরুবিনের যথাযথ ভারসাম্য না থাকলে জন্ডিস দেখা দেয়। বিলিরুবিন হল রক্তের একটি বর্জ্য পদার্থ, যার শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। এটি মূলত হলুদ রঙের হয় আর রক্ত কণিকা থেকে আয়রন বেরিয়ে যাওয়ার পর এটি অবশিষ্ট অবস্থায় পড়ে থাকে। এটিকে শরীর যখন ঠিক মতো বের করতে পারে না আর এটি জমতে শুরু করে তখনই আমাদের জন্ডিস হয়। মূলত লিভারের কোনও দোষেই এই সমস্যা হয়। লিভার রক্ত থেকে অশুদ্ধ উপাদান ছেঁকে নেয়। এভাবে বিলিরুবিন যখন আসে লিভারের কাছে তা যদি ঠিক ভাবে ছাঁকা না হয় আর শরীর থেকে না বের হয়, তাহলেই জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কী কী উপসর্গ দেখা দেয়

১. জন্ডিস হলে সবচেয়ে আগে যেটা দেখলে বোঝা যায় সেটি হল চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া। এছাড়া ত্বকের রঙও হলদেটে হয়ে যায়।

২. প্রস্রাবের রঙ হলুদ হয়ে যায়। মলের রঙ বিবর্ণ হয়ে যায়।

৩. খুবই দুর্বল লাগে। আর ওজনও এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যায়।

৪. পেটের কাছে মাঝে মাঝে ব্যথা হয়। সারা হাতে-পায়ে আর গাঁটে গাঁটে খুব ব্যথা হয়।

৫. মাঝে মাঝেই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।

৬. সব সময়েই একটা বমির ভাব থাকে।

কী করণীয় এই সময়ে

ওষুধ তো এই সময়ে খেতেই হবে। কিন্তু ওষুধের পাশাপাশি ঘরোয়া আরও কিছু উপাদান আছে যার সাহায্যে আমরা জন্ডিসের সমস্যা কম করতে পারি। আমাদের খানিক ভালো লাগতে পারে।

আখের রস

আগেই বলেছি জন্ডিসের নেপথ্যে একটা বড় ভূমিকা আছে লিভারের। আখের রস এই লিভারের স্বাভাবিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এর পাশাপাশি বিলিরুবিনের মাত্রাও কম করে আর ঘন ঘন প্রস্রাব হতে সাহায্য করে। আর প্রস্রাব হলেই টক্সিন শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। আখের রস শুধু খেতে পারেন বা তার মধ্যে খানিক লেবুর রসও দিয়ে দিতে পারেন।

আদার রস

আদাও কিন্তু জন্ডিসে খুব ভালো কাজ দেয়। এটি আসলে মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে বেশ উপকারে আসে। আদার রস খুব একটা ভালো নয় খেতে। তাই রোজ এই সময়ে আদার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খান। এতে খেতেও ভালো লাগবে, উপকারও পাওয়া যাবে।

গাজরের রস

জন্ডিস হলে শরীর খুবই দুর্বল হয়ে যায়। তাই এই সময়ে শরীরের জোর খুব দরকার। গাজরে থাকা ভিটামিন সেই জোর দেবে শরীরে। যকৃতের কাজও স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসবে। রোজ এক গ্লাস করে গাজরের রস তাই এই সময়ে অবশ্যই খাওয়া উচিৎ।

আনারস

আনারস খুব ভালো ভাবে পরিশোধনের কাজ করে। জন্ডিসের মূল কারণই তো হল অশুদ্ধি, অর্থাৎ বিলিরুবিন ঠিক ভাবে বেরিয়ে না যাওয়া। আনারস সেই পরিশুদ্ধির কাজ করে। রস করে হোক বা এমনিই আনারস হোক, অন্তত সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন আনারস খেতেই হবে।

আমলকি

আমলকিতে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে আছে। তাই এই সময়ে আমাদের শরীরের ভিটামিনের চাহিদা এই আমলকির থেকেই পূরণ করা যেতে পারে। রোজ ভাতের সঙ্গে একটি আমলকি সিদ্ধ করে খেতে হবে। আর যদি পারেন তাহলে আমলকির রসও খান। এটি যকৃতের কোষ পুনরুজ্জীবিত করতেও বেশ কার্যকরী।

বেদানা

বেদানা শরীরে রক্ত হতে সাহায্য করে। এই সময়ে আমাদের শরীরে জোর হওয়ার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য রক্তের ভারসাম্য থাকা খুবই দরকার যা বেদানা থেকে আসবে। বেদানায় আছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আর প্রচুর সোডিয়াম। এই উপাদানগুলি জন্ডিস নিরাময়ে খুব ভালো কাজ দেয়।

এই খাবারগুলো নিয়ম করে খান। আর খুব জল খান, বেশি রোদে বেরোবেন না। শরীর ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করুন। তাহলেই দেখবেন আপনি উপকার পাচ্ছেন।

 

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular