রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫

জঙ্গি রিপনের সিলেটে ফাঁসি কার্যকর !

নিউজ ডেস্ক:

সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদ প্রাঙ্গনে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেণেড হামলা ও তিনজন নিহত হওয়ার মামলায় হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে।
বুধবার রাত ১০টা ১ মিনিটে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া।
এছাড়া একই মামলায় তৎকালীন হুজি প্রধান মুফতি হান্নান ও শহীদ শাহেদুল ওরফে বিপুলের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে গাজীপুরের কাসিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে।
রিপনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাফাত মো. শাহেদুল ইসলাম, ডিআইজি প্রিজন একেএম ফজলুল হক, কারা মসজিদের ইমামসহ প্রশাসন ও কারাগার সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। রায় কার্যকর করার পর রাত ১০টা ৪০ মিনিটে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রিপনের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
এর আগে সন্ধ্যায় রিপনের সাথে তার স্বজনরা শেষবারের মতো দেখা করেন। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে রিপনের বাবা আবু ইউসুফ ও মা সমিরুল নেসাসহ পরিবারের ২৫ সদস্য কারাগারে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এর মধ্যে কয়েকজন নারী ও শিশু ছিলেন। দুটি মাইক্রোবাস ও একটি সিএনজি অটোরিকসাযোগে তারা কারাগারে প্রবেশ করেন। সাক্ষাৎ শেষে রাত ৮টা ২৫ মিনিটে তারা বেরিয়ে যান।
পরে রাত পৌনে ৯টায় কারাগারের ভেতর প্রবেশ করেন স্থানীয় আবু তুরাব মসজিদের ইমাম মাওলানা বেলাল উদ্দিন ও ডিআইজি প্রিজন একেএম ফজলুল হক। মাওলানা বেলাল উদ্দিন কারাগারে রিপনকে তওবা পড়িয়ে রাত ৯টা ২২ মিনিটে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তওবা পড়ানোর সময় রিপনকে শক্ত মনোভাবের মনে হয়েছে। ’ রাত ৯টা ১৭ মিনিটে কারাগারের ভেতরে ঢুকেন সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাফাত মো. শাহেদুল ইসলাম। পরে রাত সাড়ে ৯টায় রিপনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারি পরিচালক অমল রতন সাহা কারাগারে ঢুকেন। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে কারাগারে ভেতর শাহজালাল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্স ঢুকে। পরে রাত ১০টা ১ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্সে করে রিপনের লাশ নিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় পুলিশ।
এদিকে, জঙ্গি রিপনের ফাঁসির রায় কার্যকরে জল্লাদ ফারুকের নেতৃত্বে তার আরো ৯ সহযোগী অংশ নেন বলে জানিয়েছে কারাসূত্র।
গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জঙ্গি রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের কাগজপত্র আসে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ আবেদন নাকচের চিঠিটি পড়ে শোনান। বিকেলে রিপনের সাথে দেখা করেন তার মা ও বাবাসহ পরিবারের ৬ সদস্য। তবে ওই সাক্ষাতটি রিপনের সাথে তার পরিবারের শেষ সাক্ষাত ছিল না বলে জানান সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়া।
এদিকে, দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসির রায় কার্যকর ঘিরে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা। পুরো কারাগার এলাকা ঘিরে তৈরি করা হয় নিরাপত্তাবলয়। বিকেল থেকে কারাগারের সামনের রাস্তা দিয়ে যানবাহন ও জনসাধারনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জেদান আল মুসা জানান- জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর নিয়ে সিলেট কারাগার এলাকায় মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়ে যাতে অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা না ঘটে সেজন্য কারাগারের চারপাশের রাস্তায় যানবাহন তল্লাশি ছাড়াও পুলিশের টহল দলের সংখ্যা বাড়ানো হয়। এছাড়া সাদা পোষাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ কারাগার এলাকায় অবস্থান নেন।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারের প্রধান ফটকে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন, কনস্টেবল রুবেল আহমদ এবং হাবিল মিয়া নামের এক ব্যক্তি নিহত এবং আনোয়ার চৌধুরীসহ ৭০ জন আহত হন। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুল, দেলওয়ার ওরফে রিপনকে মৃত্যুদন্ড এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন দন্ড দেন সিলেট দ্রুত বিচার আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। তবে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আপিল করেননি। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়েও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে তিনজঙ্গির। পরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হুজি নেতা মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপন আপিল করেন। গত ৭ ডিসেম্বর তাদের আপিল আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন রিভিউ আবেদন করলে শুনানী শেষে ১৯ মার্চ সে আবেদনও খারিজ হয়। গত ২১ মার্চ রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ২২ মার্চ হুজি নেতা মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল এবং দেলওয়ার ওরফে রিপনের রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। সিলেট কারাগারে থাকা দেলওয়ার ওরফে রিপনকে এ রায় শুনানো হয়। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় এ তিন জঙ্গির মৃত্যু পরোয়ানা বিচারিক আদালত থেকে কারাগারে পৌঁছায়। গত ২৭ মার্চ রিপন রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিতভাবে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। কিন্তু প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয় রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular