নিউজ ডেস্ক:
চোরাচালান এড়াতে আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের ওপর করের বোঝা অসহনীয় পর্যায়ে না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)।
একই সঙ্গে সিগারেট ও বিড়ির ক্ষেত্রে কর বৈষম্য কমিয়ে তা সমন্বয়ের পাশাপাশি করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্মেলন কক্ষে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) চেয়ারম্যান গোলাম মাঈনুদ্দিন বলেন, ‘সিগারেট কোনো অবৈধ পণ্য নয়, বৈধ পণ্য হওয়ায় এর রাজস্ব কমানো নিয়ে সবসময় আমরা এনবিআরের সাথে আলোচনা করি। সিগারেট ‘গোল্ডেন গুস’। এটা যেন সবসময় সোনার ডিম পাড়তে পারে সেদিকে এনবিআরকে নজর রাখতে হবে। এর সাথে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব জড়িত, সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বাজেটে এমনভাবে পলিসি নেওয়া উচিত যাতে টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি টিকে থাকে, এনবিআরও সঠিকভাবে রাজস্ব পায়।
অতিরিক্ত কর আরোপ করা হলে সিগারেট চোরাচালান বেড়ে যাবে, এমন অজুহাত দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন কোনো পণ্য নেই যা দেশে চোরাচালানের মাধ্যমে আসে না। সিগারেটও তার ব্যতিক্রম নয়। সিগারেটের রাজস্ব পলিসি এমনভাবে করা হয়েছে যাতে সিগারেট চোরাচালান বেড়ে গেছে। এনবিআরের পদক্ষেপের ফলে কিছুটা হলেও কমেছে। দেশের বাইরে যে সিগারেট ১৮-১৯ ডলারে কেনা যায় তা দেশে ২৫ ডলারে কিনতে হয়। চোরাচালান রোধ সবসময় পুলিশ, এনবিআরের কর্মকর্তা দিয়ে হবে না। পলিসির মাধ্যমে চোরাচালান রোধ করতে হবে। চোরাচালানের কথা মাথাই রেখেই বাজেটে করতে হবে।’
বাজেটে রাজস্ব যেন অসহনীয় পর্যায়ে না যায় সে চিন্তা করতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজস্ব কাঠামো অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলে মানুষ বিকল্প চিন্তা করে। সিগারেটের ওপর কর কাঠামো নিয়ে প্রস্তাব দিলে লাভ হয় না। সিগারেটের ওপর ৮০ শতাংশ শুল্ক পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। সিগারেটের ওপর কর এমনিতে বেশি। করপোরেট ট্যাক্স থেকে শেয়ারহোল্ডারদের থেকে যায়। সেজন্য এ ট্যাক্স কমানো প্রয়োজন।
আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন বলেন, এনবিআর রাজস্বের জন্য তামাক ইন্ডাস্ট্রির ওপর নির্ভরশীল। এখানের ইন্ডাস্ট্রিসমূহ প্রতিষ্ঠিত। আশা করি সরকার প্রতিষ্ঠিত ইন্ডাস্ট্রিসমূহের দিকে নজর দেবে।
বিএটিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক সেবনকারীর সংখ্যা ৫ শতাংশের নিচে নিয়ে যেতে চান। দেশে সিগারেট ও বিড়ি এ দুই খাতে তামাক সেবনকারীর সংখ্যা বেশি। সিগারেটের মতো বিড়ি সেবনকারীর প্রায় ৫০ শতাংশ। বিড়ি ও সিগারেটের দুই ধরনের করনীতি রয়েছে। এখানে সমন্বয় হওয়া দরকার। ৫০ শতাংশ বিড়ি সেবনকারী হলেও মাত্র ২ শতাংশ রাজস্ব আহরণ করা হয় এ খাত থেকে। যেখানে সিগারেট থেকে এ বছর রাজস্ব আহরিত হবে ১৯ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা। সিগারেটের মতো বিড়ি, জর্দা, গুলেও কর বাড়ানোর দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে এফসিটিসিতে বাংলাদেশ প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ। প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সেজন্য এনবিআরের এখন কাজ হচ্ছে তামাক থেকে আসা রাজস্ব অন্য খাত থেকে কীভাবে আসবে তা বের করা।
আলোচনা সভায় এনবিআর ও বিসিএমএর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।