চোখ মহান আল্লাহ প্রদত্ত মহামূল্যবান নিয়ামত। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এটিকে হেদায়েত, ঈমান গ্রহণ, উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। সুরা বালাদের ৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি কি তোমাদের চক্ষু দিইনি?’
মহান আল্লাহর এই অমূল্য নিয়ামতের পরিচর্যা করা সবার দায়িত্ব। মহানবী (সা.) তাঁর চোখের যত্ন নিতেন। তিনি নিয়মিত চোখে সুরমা ব্যবহার করতেন।
উল্লেখ্য, অনেকের ধারণা সুরমা তুর পাহাড়ে পাওয়া যায়। হজরত মুসা (আ.) যখন তুর পাহাড়ে আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখতে চেয়েছিলেন তখন আল্লাহর তাজাল্লীতে পাহাড় ভস্ম হয়ে গিয়েছিল। সেই ভস্মীভূত পাহাড় থেকেই সুরমার উৎপত্তি ও ব্যবহার। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
সুরমা একটি খনিজ দ্রব্য। এর সাথে তুর পাহাড়ের কোনো সম্পর্ক নেই। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয়, অ্যান্টিমনি। অ্যান্টিমনি হল একটি মৌলিক পদার্থ। এটি একটি চকচকে ধূসর ধাতুকল্প, এটি প্রকৃতিতে মূলত সালফাইড খনিজ স্টিবনেট হিসাবে হিসাবে পাওয়া যায়। অ্যান্টিমনি যৌগগুলি প্রাচীন কাল থেকেই পরিচিত ছিল এবং গুঁড়ো করে চিকিৎসাক্ষেত্রে ও প্রসাধনীতে ব্যবহার হত, এটিকে প্রায়শই আরবি কাজল নামে ডাকা হত।
চোখের যত্নে তিনি সুরমাকে এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে, সাহাবায়ে কেরামকে তিনি এটি লাগানোর ব্যাপারে উত্সাহ দিতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো এবং তা দিয়ে তোমাদের মৃতদের কাফন পরাও; কেননা তা তোমাদের উত্তম পোশাক। আর তোমাদের জন্য উত্তম সুরমা হলো ‘ইসমিদ’ সুরমা; কারণ তা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং চোখের পাপড়ি গজায়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৭৮)
চোখের পাপড়ি মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। শুধু সৌন্দর্যবর্ধনই করে না, ধুলা-দূষণ ও বাতাস থেকে আমাদের চোখের সুরক্ষায় ঢাল হিসেবেও কাজ করে। অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও মানুষের মুখভঙ্গি বুঝতেও চোখের পাপড়ির প্রভাব রয়েছে। জার্নাল দ্য রয়াল সোসাইটি ইন্টারফেস সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন মতে, বাতাসে মিশে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা, সংক্রামক জীবাণু, অণুজীব ছাঁকার কাজ করে চোখের পাপড়ি। এরপর ছাঁকনকৃত বাতাস চোখের ভেতর প্রবাহিত হতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অক্ষিগোলকে মিউকাস, তেল ও পানির সংমিশ্রণে যে তরল প্রলেপ থাকে সেটা শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে চোখের পাপড়ি। ফলে চোখ শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়।
তাই আমাদের উচিত চোখের যত্নে মহানবী (সা.)-এর এই সুন্নতটি পালন করা। এতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিও পাওয়া যায়, এবং চোখের সুরক্ষাও পাওয়া যাবে।