বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ কয়েকটি বিভাগের সব তেলপাম্প বন্ধ

১৫ দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট!
নিউজ ডেস্ক:কোথাও দড়ি টাঙিয়ে, কোথাও ড্রাম ও প্লাস্টিকের খুঁটি, বাঁশ দিয়ে প্রবেশপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বন্ধ ক্যাশ কাউন্টার। অলস সময় কাটাচ্ছেন বিক্রয়কর্মীরা। নেই নিত্যদিনের প্রাণচাঞ্চল্য। তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধি, পেট্রলপাম্প-সংলগ্ন জমির ইজারা বাতিলসহ ১৫ দফা দাবিতে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ জেলাসহ খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব পেট্রলপাম্পে শুরু হওয়া ধর্মঘটের প্রথমদিনের চিত্র এটি। গতকাল রোববার সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ধর্মঘট শুরু হয়। তাই রোববার সকাল ছয়টা থেকে সব পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল বিক্রি, ডিপো থেকে আনয়ন এবং পরিবহন বন্ধ রাখা হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য পেট্রলপাম্প ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় পাম্পে পাম্পে তেল কেনার জন্য ধরণা দিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন যানবাহনের মালিক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বিকেল থেকে অধিকাংশ পাম্পে মোটরসাইকেল চালকদের ভিড় দেখা যায়। তবে ধর্মঘটের কারণে তাঁদেরকেও ফিরতে হয় তেল ছাড়াই।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গা জেলার ২২টি তেলপাম্প বন্ধ রেখে দেশের তিন বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। গতকাল সারা দিন চুয়াডাঙ্গা শহরের টার্মিনাল, ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড, একাডেমি মোড়, দৌলাতদিয়াড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার প্রত্যেকটি তেলপাম্পের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। সকাল থেকে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছেন পাম্পগুলোর মালিক ও শ্রমিকেরা। কেউ তেল নিতে গেলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তেল না পেয়ে ফিরে যাওয়া মোটরসাইকেল চালক দবির আলী বলেন, ‘ধর্মঘটের কারণে পেট্রল বিক্রি বন্ধ রয়েছে, আমার জানা ছিল না। সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে পাম্পে জ্বালানি তেল নিতে এসে দেখি, তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। ব্যবসার কাজে প্রতিদিন মোটরসাইকেলে আলমডাঙ্গা থেকে চুয়াডাঙ্গা, সরোজগঞ্জ, দর্শনা এলাকায় যাতায়াত করতে হয় আমাকে। তেল না পেয়ে খুবই বিপদে পড়েছি।’
শহরের একটি তেল পাম্পের শ্রমিক সুমন আলী বলেন, ‘১৫ দফা দাবিতে মালিকেরা ধর্মঘট পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মবিরতি পালন করছি। পাম্পে আছি, কিন্তু তেল বিক্রি করছি না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।’
এ প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গা জেলা জ্বালানি তেল, পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতির সভাপতি হাবিল হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ১৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলার সব তেল পাম্পের মালিক ও শ্রমিকেরা ধর্মঘট পালন করছেন। তেলের কোনো সংকট নেই। তবে দাবি না মানা পর্যন্ত কোনো পাম্প থেকে তেল বিক্রি বা সরবরাহ হবে না। বিশেষ ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি প্রয়োজনে কিছু যানবাহনে তেল দেওয়া হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।’
মেহেরপুর:


মেহেরপুরসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সব ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ও জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। গতকাল রোববার সকাল থেকে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর বিভাগের সব জেলাতে তেল উৎপাদন, বিক্রয় ও পরিবহন বন্ধ রেখেছেন মালিক-শ্রমিকরা। বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতি, বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়ন ও পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ট্যাংকলরি শ্রমিক সমিতির উদ্যোগে এ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। এ ধর্মঘটের ফলে মেহেরপুরের তেল পাম্পগুলো তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ করেই তেল পাম্পগুলো ধর্মঘট শুরু করাই বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
ঝিনাইদহ:


১৫ দফা দাবিতে ঝিনাইদহের পেট্রল পাম্পগুলোতে চলছে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট। সকাল থেকে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছেন পাম্পগুলোর মালিক ও শ্রমিকেরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেল, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের মালিক-শ্রমিকেরা। জ্বালানি তেল না পেয়ে অনেককে পাম্প থেকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। অনেকে শহর থেকে দূরের উপজেলায় যেতে পারছেন না। তেলের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কিছু বাস-ট্রাক। মোটরসাইকেল চালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, শহর থেকে কালীগঞ্জ যাওয়ার জন্য তেল নিতে পেট্রল পাম্পে আসেন তিনি। কিন্তু এসে দেখতে পান, তেল বিক্রি বন্ধ। এখন বাসায় ফিরে যেতে হচ্ছে। ঝিনাইদহ শহর থেকে হরিণাকু-ুগামী আলমগীর কবীর বলেন, সকালে তিনি তেল নিতে এসে দেখেন, তেল বিক্রি বন্ধ। তাই অফিসে যেতে পারেননি।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ এলাকায় জেভি ফিলিং স্টেশনের মালিক নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার জানান, তাঁরা ১৫ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছেন। সব পেট্রল পাম্প থেকে সব প্রকার জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ট্র্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধি, জ্বালানি তেল বিক্রিতে ৭.৫ ভাগ কমিশন, প্রিমিয়ান পরিশোধ স্বাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের পাঁচ লাখ টাকা দুর্ঘটনা বীমা চালুসহ ১৫ দফা দাবি আদায়ে রোববার থেকে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব জেলায় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ও জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতি ও ট্যাংকলরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ১৫ দফা দাবিগুলো হচ্ছে:
জ্বালানি তেল বিক্রয়ের প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের কমিশন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নাকি পরিবেশক পরিশোধ করবেন, সেটা সুনির্দিষ্ট করা, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরির শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দুর্ঘটনা বীমা প্রদানের নীতিমালা প্রণয়ন করা, ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধি করা, পেট্রলপাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ প্রথা বাতিল করা, পেট্রলপাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ প্রথা বাতিল করা, পেট্রলপাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল করা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রলপাম্প-সংলগ্ন মহাসড়কের পাশের জমি ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল করা, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ব্যতীত অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক লাইসেন্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতার নিয়ম বাতিল করা, বিএসটিআই কর্তৃক ভূগর্ভস্থ তেল মজুতের ট্যাংক ৫ বছর পরপর বাধ্যতামূলক ক্যালিব্রেশনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ব্যতীত সরকারি অন্যান্য দাপ্তরিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ডিলার/এজেন্টদের অযথা হয়রানি বন্ধ করা, নতুন কোনো পেট্রলপাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রে পেট্রলপাম্পের মালিক সংগঠনের ছাড়পত্রের বিধান চালু করা, পেট্রলপাম্পের পাশে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তি সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং সড়ক মহাসড়ক থেকে ট্যাংকলরি থেকে জোরপূর্বক পৌরসভার চাঁদা আদায় বন্ধ করতে হবে।
দাবি বাস্তয়ন-সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একই দাবি নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল বিপিসি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে জ্বালানি কোম্পানির তিন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে মালিক সমিতির সঙ্গে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১৫ দফা দাবিগুলো যৌক্তিক বলে সবাই মত প্রকাশ করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন অচিরেই তা বাস্তবায়ন করা হবে। বিপিসি চেয়ারম্যানের প্রতিশ্রুতির আলোকে ১৬ এপ্রিল আহুত অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। এরপর দীর্ঘ ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও দাবি বাস্তবায়ন না করে ফিলিং স্টেশনসহ জ্বালানি ব্যবসায়ীদের জ্বালানী কোম্পানিসমূহ ও স্থানীয় প্রশাসন চরমভাবে হয়রানি করছে। যেসব বিষয়সমূহ আলোচনার টেবিলে বা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি চলমান, সেসব বিষয়সমূহ নিয়ে হয়রানি করা অযৌক্তিক বা জুলুম বলে প্রতিয়মান হয়। ফলে জ্বালানি ব্যবসা এখন চরম হুমকির মুখে। এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আলোচনা-প্রতিশ্রুতি যখন ব্যর্থ হয়, তখন আন্দোলনের বিকল্প থাকে না।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular