বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিদর্শন, প্রতিবাদ ও উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারা দেশে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়ি, গাড়ি, এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এ অবস্থায় সরকারি দপ্তর ও পুলিশ সদস্যরা তাদের কাজে পুরোপুরিভাবে ফিরে আসেনি। এই সংকটময় সময়ে সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার সকালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করে। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী শিক্ষার্থীদের তদারকিতে উঠে আসে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনায় রয়েছে এই হাসপাতালটি। যেখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা স্থানীয় জনগণের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসময় দেখা যায়, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে লাইট ও ফ্যান নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে, টয়লেটগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে, রোগীদের পক্ষে সেগুলো ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব। হাসপাতালের সম্প্রসারিত নতুন ভবনে দুটি লিফট থাকলেও একটি বন্ধ রয়েছে। অন্যটি শুধুমাত্র পঞ্চম ও ষষ্ট তলায় ওঠানামার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে বৃদ্ধসহ অন্যান্য রোগীদের সিঁড়ি ভেঙে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ওঠানামা করতে হয়।

রোগীরা অভিযোগ করেন, কুকুর ও বিড়ালের কামড়ের প্রতিষেধক র‌্যাবিক্স ভ্যাকসিন হাসপাতালের সাপ্লাইয়ে থাকলেও তাদের তা বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি কর্মরত আয়া ও অন্যান্য কর্মচারীরা রোগীদের কাছ থেকে টাকা ছাড়া কোনো সেবা দিচ্ছে না। ছোটখাটো সেবার জন্যেও রোগীদের ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে।

আরও উদ্বেগজনক হলো, চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট সময়মতো হাসপাতালে আসছেন না। হাসপাতালের অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হলেও চিকিৎসকদের বেশিরভাগই নিয়মিত দেরি করে আসছেন এবং আগেই চলে যাচ্ছেন। এই অনিয়মের ফলে রোগীরা সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দীর্ঘদিনের সমস্যা মোকাবিলায় শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিস্কার করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এর আগে শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল প্রাঙ্গনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানও চালিয়েছে। তাদের এই প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও এটি স্থায়ী সমাধান নয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের এই দীর্ঘস্থায়ী অব্যবস্থাপনা ও দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে এখনই প্রয়োজন প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপ। আমাদের এই প্রতিবাদ ও উদ্যোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে সফল হয়েছে, তবে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও কার্যকরী পদক্ষেপ।’

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘হাসপাতালের শয্যা সংখ্যার তুলনায় চারগুন বেশি রোগী বর্হিবিভাগ ও অন্তবিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। এছাড়ও প্রতিটি রোগীর সঙ্গেই পরিবারের চার থেকে পাঁচজন করে সদস্যরা হাসপাতালে অবস্থান করেন। এতে করে হাসপাতালের ওপর স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি চাপ পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘রোগীর চাপ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। জনবল সংকট হাসপাতালের জন্য প্রধান সমস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড ও টয়লেট পরিষ্কার রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’ হাসপাতলের ওয়ার্ডে অচল পড়ে থাকা ফ্যান ও লাইটের বিষয়ে এই চিকিৎসা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এগুলো গণপূর্ত বিভাগের অধীনে রয়েছে। আমরা অচল হওয়া ফ্যান ও লাইটের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছি। বাজেট না আসায় এগুলোর মেরামত বা পরিবর্তনও সম্ভব হচ্ছে না।’

কুকুর ও বিড়ালের কামড়ের শিকার রোগীদের বাইরে থেকে র‌্যাবিক্স ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের তদারকিতে ৩০ ফাইলের বেশি ভ্যাকসিন হাসপাতাল থেকেই উদ্ধার হয়। এ বিষয়ে ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘আপাতত র‌্যাবিক্স ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই। সামান্য পরিমাণ ভ্যাকসিন যা ছিল, তা অসহায় ও হতদরিদ্রদের দেয়ার জন্য।’

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular