নিজিস্ব প্রতিবেদকঃ
চুয়াডাঙ্গা জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীরা বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পথ কনসার্ট আয়োজন করে আসছে। এই মানবিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে সাংস্কৃতিক কর্মীরা চুয়াডাঙ্গা পৌর শহর, দামুড়হুদা, সরোজগঞ্জ, জীবননগর, দর্শনা ও কার্পাসডাঙ্গায় পথ কনসার্ট করেছে। স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন, শিল্পী এবং ব্যবসায়ীরা কনসার্টগুলোতে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া সাধারণ মানুষ সাধ্যমতো বন্যার্তদের জন্য আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলার সাংস্কৃতিক কর্মী ব্যানারে শিল্পীরা ২ লাখ ৪ হাজার ৭৩৫ টাকা সংগ্রহ করেছে। যা তারা সরাসরি বন্যার্ত এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছে দেবে।
তবে এই উদ্যোগে শিল্পীরা সরোজগঞ্জ, আলমাডাঙ্গা ও দর্শনার পথ কনসার্টে বাঁধার সম্মুখিন হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মুক্তমঞ্চে চুয়াডাঙ্গা জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিল্পীরা এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন চুয়াডাঙ্গা অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহসাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মানিক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন অরিন্দম চুয়াডাঙ্গার সহসভাপতি আব্দুল মমিন টিপু, চুয়াডাঙ্গা আবৃত্তি পর্ষদের পরিচালক মনোয়ারা খুশি, দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটারের সাজ্জাদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাট্য সম্পাদক হিরণ-উর-রশিদ শান্ত, চুয়াডাঙ্গা সংলাপের নাট্য সম্পাদক নূর আলম, হারুনুর রশিদ জুুয়েল, দর্শনা ফ্রেন্ডস সংগীত একাডেমির শাহানাজ সাজু, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, সাহিত্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সাংস্কৃতি কর্মীরা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী। গান গেয়েই আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। সম্প্রতি ভারতের পানি আগ্রাসনে দেশের ১১ জেলার মানুষ তাদের বাসস্থান হারান। দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের সাধ্যমতো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা শিল্পী তাই মানুষকে গান শুনিয়ে বন্যার্তদের জন্য অনুদান সংগ্রহে বিভিন্ন সময়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহর, দামুড়হুদা, সরোজগঞ্জ, জীবননগর, দর্শনা ও কার্পাসডাঙ্গায় কনসার্ট করি। তবে আলমডাঙ্গা, সরোজগঞ্জ ও দর্শনায় আমাদের পথ কনসার্টে বাঁধা দেয়াসহ পথ কনসার্ট বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়।’ বক্তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেন।সাংস্কৃতিক কর্মী ও কণ্ঠশিল্পী হিরণ-উর-রশিদ শান্ত বলেন, ‘আলমডাঙ্গায় মাগরিবের নামাজের পূর্বেই আমরা কনসার্ট বন্ধ করি। নামাজ শেষ হওয়ায়ও অনেক পরে আমরা পুনরায় অনুষ্ঠান শুরু করি। এসময় কিছু যুবক মোটরসাইকেলযোগে সেখানে আসে এবং মাইক বন্ধ করতে বলে। একইভাবে সরোজগঞ্জে এক দোকানদার আজানের আগে শেষ হতে যাওয়া গান বন্ধ করার চেষ্টা করে।’
তিনি আরও বলেন, দর্শনার কনসার্টে পাঞ্জাবি ও টুপি পরিহিত একদল মৌলবাদী ব্যক্তিরা ‘গান বন্ধ কর’ বলতে বলতে কনসার্টের সামনে আসে। তারা বিক্ষুদ্ধ ছিল এবং সেখানে গান পরিবেশন করা যাবে না বলে চিৎকার শুরু করেন। তারা বলেন, এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে, এখন আর কোনো অপকর্ম চলবে না। এসময় তারা জোরপূর্বক গান বন্ধ করতে মঞ্চে ওঠেন। তিনি বলেন, এসময় কনসার্টের দর্শকরা ক্ষুব্ধ হন এবং প্রতিরোধ করেন।’
তিনি আরও বলেন, আমরা তো মানুষের জন্য কাজ করছি, দেশ স্বাধীন হয়েছে, এ দেশ তো সকলের। এদেশে কোনো বৈষম্য, মৌলবাদী থাকার কথা নয়। তাহলে কেন আমাদেরকে এভাবে অপদস্ত করা হলো গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে সবার কাছে আমাদের এই প্রশ্ন থাকলো। তবে আমরা থেমে থাকব না। আমরা শিল্পী গানে গানেই আমরা মানুষের পাশে থাকব চিরকাল।