চুয়াডাঙ্গায় দিনকে দিন অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের দাম। বাজারে কাঁচা পণ্য থেকে আমিষ পণ্য সবকিছুর দাম যেন আকাশ ছোঁয়া। ফলে নিত্য পণ্য এখন সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে পেয়েছে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, বেগুনসহ ও সব ধরনের সবজির। এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় প্রথমদিনের মতো বিশেষ টাস্কর্ফোস বাজারে অভিযান চালিয়েছে। তবে এই অভিযানে কাউকে জরিমানা করা হয়নি। প্রথমদিন হিসেবে শুধুমাত্র সচেতন করেই শেষ করা হয় অভিযান।
গতকাল শুক্রবার শহরের নীচের বাজার ঘুরে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করেই আমদানি কমেছে পেঁয়াজের। তাই কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে পাইকারি পর্যায়ে ১১০ টাকা কেজি পেঁয়াজ। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে রসুনের দাম ২০০ টাকা। দাম স্বাভাবিক রয়েছে গত সপ্তাহ থেকে আদার দাম কেজি দর ১৪০ টাকা। গত এক মাস ধরে কাঁচা মরিচে অস্থিরতা। তবে গতকাল শুক্রবার বাজারে দেখা মিলেছে ভারতের এলচি কাঁচা মরিচ। তাও দাম নাগালের বাইরে। কেজিতে পাইকারি পর্যায়ে কাঁচা মরিচের দাম ৪৩০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এক লাফে ৬০ টাকা বাড়তি হয়ে কেজিতে খুচরা পর্যায়ে বেগুনের দাম ১৪০ টাকা। আর সব প্রকার সবজিতে ৩০ টাকা বাড়তি হয়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় ছুঁয়েছে সব ধরনের সবজি। তবে আগের মতোই আলুর দাম। কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা। আবার দামে অস্বস্তি আমিষের বাজারে। গত সপ্তাহ ধরে ডিমের দাম এক খাঁচি ৩৯০ টাকা। আর সব প্রকার মাছ কেজিতে ৫০ টাকা বাড়তি। তবে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে মাংসের দামে। গত সপ্তাহের মতো সয়াবিন খোলা বাজারের কেজিতে ৫ টাকা বাড়তি।
বাজারে আসা এক ক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, বাজারে দেড় হাজার টাকা নিয়ে এসে সবজি আর কাঁচা মরিচ কিনলাম তাই ১ হাজার টাকা শেষ। থাকলো আর ৫০০ টাকা। এখন অনেক কিছু কি ভাবে ৫০০ টাকার মধ্যে কিনবো সেটাই বুঝতে পারছি না।
আরেক ক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছেই। সবজির বাজারে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মাংসের বাজারে আসলাম। সবজির থেকে মাংসের দাম কিছুটা সহনীয়। ডিমের বাজার রাতারাতি অস্থির। এভাবে দিনকে দিন বাজারে যেন আগুন লেগেই আছে। কবে যে বাজারে স্বস্তি ফিরবে বুঝতে পারছি না।
এদিকে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ বাজার তদারকি শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার নিচের বাজারের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার, আড়ত সরেজমিনে পরিদর্শন করে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারকি করে বিশেষ টাস্কফোর্স। অভিযানে ডিম, আলু, তেল, পেঁয়াজ, সবজি, চিনি ইত্যাদি নিত্যপণ্যের ওপর এই মনিটরিং কার্যক্রম চালানো হয়।জেলা বিশেষ টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল হামিদ রেজার নেতৃত্বে এই বাজার অভিযান চালানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) হাসান মিয়া, সদর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল, অতিরিক্ত উপ পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কায়ছার ইকবাল, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন এবং ছাত্র প্রতিনিধি মুশফিকুর রহিম ও রাকিব মাহমুদ।
অভিযানের শেষে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল হামিদ রেজা বলেন, চুয়াডাঙ্গার পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বাজার ও আড়ত সরেজমিনে পরিদর্শন করছি, প্রতিটি ব্যবসায়ীকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে তারা যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখে এবং সহনীয় লাভ করে। ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করবো এবং এটা উপজেলা পর্যায়েও শুরু করবো। প্রথম দিন হিসেবে জরিমানা না করে ব্যবসায়িদের সর্তক করা হলো।