চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের দীননাথপুর গ্রামের শিশু জিহাদের জীবন আর তার পরিবারে নেমে এসেছে দুঃখ আর অভাব। ১২ বছর বয়সী শিশু জিহাদ ও তার বাবা-মায়ের একমাত্র ভরসা ছিল ঋণের টাকায় কেনা ব্যাটারিচালিত একটিমাত্র পাখিভ্যান। যা ছিল শিশুটির পরিবারের আয়ের উৎস। অসুস্থ পিতা-মাতার ওষুধ ও সংসার খরচ যোগাতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে শিশুটিই হয়ে ওঠে ভ্যানটির চালক। এদিকে, গত বুধবার এক যাত্রীবেশী দুর্বৃত্ত কৌশলে সেই ভ্যানটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এতে অসুস্থ বাবা-মার ওষুধ ও সংসার খরচের একমাত্র উৎস হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে পুরো পরিবার।
মা হাফিজা খাতুন অসুস্থ, বাবা অক্ষম:
শিশু জিহাদের মা হাফিজা খাতুন দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগে ভুগছেন, যার ফলে তিনি বিছানাগত। বাবা তাহাজ্জেল মিয়া বয়সের ভারে আর ভ্যান চালাতে পারেন না। তিনি অ্যাজমার রোগী। তাই ৮ মাস আগে একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জিহাদের জন্য ভ্যানটি কিনেছিলেন। সেই ভ্যান দিয়েই জিহাদ প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা উপার্জন করে সংসার চালাতো এবং ওষুধ কিনতো।ভ্যান হারানোর মর্মান্তিক ঘটনা:
শিশু জিহাদ জানায় গত বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে এক যাত্রী তার ভ্যানে উঠে আলমডাঙ্গা যাওয়ার কথা বলে। ভাড়া দরদাম শেষে আলমডাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছালে, ওই যাত্রী জিহাদকে পাশের দোকান থেকে একটি বস্তা আনতে বলে। বস্তা আনতে গেলে দুর্বৃত্তটি তার ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় সে দিশেহারা হয়ে চোখের পানি ফেলে এবং দীর্ঘসময় খুঁজতে থাকলেও ভ্যান আর ফিরে পায়নি।বাবা-মায়ের অঝোর কান্না:
বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া বলেন, ‘আমি ভ্যান চালাতে পারি না, তাই ছেলেকে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। এখন সেটা হারিয়ে গেল। ঘরে ওষুধ কেনার কিংবা চাল কেনার টাকাও নেই। ঋণের টাকা শোধ করবো কিভাবে? বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।মায়ের আকুতি:
মা হাফিজা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলের উপার্জনেই আমাদের সংসার চলে। এখন ভ্যান হারানোর পর আমরা কীভাবে বাঁচবো বুঝতে পারছিনা। আমাদের সংসার চালানোর মত আর কেউই নেই।’
আলমডাঙ্গা থেকে ভ্যানটি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গণি মিয়া জানান, ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি জানতেন না। তবে তদন্ত করে দেখবেন।